ব্যাংকার্স সভায় সিদ্ধান্ত
জুলাই থেকে ‘স্মার্ট’ পদ্ধতিতে ঠিক হবে সুদহার
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আইএমএফের শর্ত ও ব্যাংকের তারল্য সংকট কাটাতে ৯ শতাংশ সুদহার তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামীতে ঋণের সুদহার কত হবে তা ‘স্মার্ট’ পদ্ধতিতে ঠিক করা হবে। নতুন এ পদ্ধতি চলতি বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে।
রোববার (২ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের(এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেনের নেতৃত্বে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় ব্যাংক ঋণের চলমান ৯ শতাংশ ক্যাপ রয়েছে তা কীভাবে তুলে বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় জানানো হয়, ৯ শতাংশ ঋণ সুদহার তুলে দিয়ে ট্রেজারি বিল, বন্ডের ছয় মাসের গড় সুদহার(ওয়েটেড) বিবেচনা করে প্রতি মাসে একটি রেফারেন্স রেট নির্ধারণ করে দিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; এর সঙ্গে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ৯ শতাংশ ক্যাপ তুলে দেওয়া হবে। আগামী মুদ্রানীতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। আশা করছি আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন করা হবে। সুদহার নির্ধারণের নতুন এ পদ্ধতির নাম দেয়া হয়েছে ‘স্মার্ট’ (শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ)। তবে এখনো এ বিষয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে; আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর চূড়ান্ত হবে। নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে প্রতিমাসেই গ্রাহকের ঋণের সুদহারে পরিবর্তন আসতে পারে।
মুখপাত্র জানান, প্রতি মাসেই ছয় মাসের গড় সুদহার দেখে একটি রেফারেন্স রেট ঘোষণা করা হবে, যা হবে বাজারভিত্তিক। যদি দেখা যায় গড় সুদহার এক শতাংশ বা বা নিম্নমুখী হয়েছে বা এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে যা বাজারমুখী না, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার বুঝে সুদহার নির্ধারণ করে রেফারেন্স রেট জানিয়ে দিবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া রেফারেন্স রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুদ নিতে পারবে। অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেফারেন্স রেটে ঋণ দিতে পারবে।
সভায় আগামী মুদ্রানীতি, সুদহার, আমদানি-রফতানি পণ্যের মূল্য হার, ডলারের বিনিময় হার, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও ক্যাশলেস বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে অর্থ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদহারের ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে সম্প্রতি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বাড়িয়ে সুদ নিতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখনো এ ইস্যুতে কোনো সার্কুলার জারি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) থেকে পাওয়া ঋণের শর্ত পালনে ৯ শতাংশের সুদহারের সীমা তুলে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডজন খানেক ব্যাংক বাফেদার ঘোষিত দরের চেয়ে বশি দামে ডলার বিনিময় করছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে রোববারের ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে বলা হয়েছে বাফেদার দরের চেয়ে কেউ বেশি দরে ডলার কেনা-বেচা করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদারকি করে দেখছে।
এসআই/এমজে