আমদানি নিয়ন্ত্রণ ডলার সংকট সমাধানের সঠিক পথ নয়
বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী ডলারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু বাংলাদেশ না, এরচেয়েও অনেক বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। ফলে আমরাও এতে কিছুটা চাপে আছি। এ ক্ষেত্রে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংকট সমাধান করা স্থায়ী সমাধান নয় বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। আগামীকাল (বুধবার) থেকে অবসরে যাচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম। এ হিসেবে আজকেই নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস।
বিজ্ঞাপন
মুখপাত্র বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশকে রপ্তানি-রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স কিছুটা কমছে। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের পরিমাণও কমছে। এতে রিজার্ভে কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। তবে এই চাপ থাকবে না। কারণ রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় দুটোই বাড়বে।
ডলারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ডলারের দাম স্বাভাবিক হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজারে কোনো ডলার সাপোর্ট দেওয়া উচিত না।
রিজার্ভ কমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভ কমেছে এটা সত্য। কিন্তু রিজার্ভ তো বিভিন্ন কাজে লাগাতে হবে। এটা বাড়বে কমে স্বাভাবিক। এক জায়গায় যে রিজার্ভ স্ট্যাবেল রাখতে হবে এমনও না।
তিনি বলেন, রিজার্ভ থেকে ইডিএফ ফান্ডে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য ঠিক ছিল। এটার টাকা নিয়ে যদি কেউ ফেরত না দেয় সেটাও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।
আমদানিতে নানা শর্তের পরও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) কমছে। গত বছর ২৫ আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন। এখন তা ৩৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ১৫৪ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এই অঙ্ক গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ডলারের সংকট নিরসন ও প্রবাসী আয় বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই বসে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় এ দাম নির্ধারণ করে।
বাফেদার ঘোষিত দাম অনুযায়ী, এখন থেকে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা কিনতে পারবে ব্যাংক। বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে প্রতি ডলার ৯৯ টাকায়। এ ছাড়া রেমিট্যান্স আহরণ ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ব্যাংকগুলোর গড় (ওয়েট অ্যান্ড এভারেজ) মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
গত মাস সেপ্টেম্বরে বাফেদা রেমিট্যান্স কেনার সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘টাকার বিনিময় মূল্য’ অংশে বলা হয়েছে, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এবং বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তব্যাংক লেনদেন ও গ্রাহক লেনেদেনের জন্য টাকার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো।
সবশেষ ৩ অক্টোবরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ২৫ পয়সা এবং সর্বনিম্নও ১০২ টাকা ৯০ পয়সা দেওয়া আছে।
এসআই/ওএফ