দেশে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট বা আরটিজিএস এর মাধ্যমে এ লেনদেন অনলাইনে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) এ সেবা চালুর প্রথম দিন ৫২টি লেনদেন নিষ্পন্ন হয়। যার অংকের পরিমাণ ১১ লাখ ডলার।  

দেশে এতোদিন মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড, ইউরো, কানাডার ডলার ও জাপানের ইয়েন এই পাঁচটি বিদেশি মুদ্রা কাগজ-কলমভিত্তিক সনাতন লেনদেন ব্যবস্থায় নিষ্পত্তি হতো। এ পদ্ধতিতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের সঙ্গে কাগুজে নথি ব্যবহার করে ব্যাংকের কর্মকর্তারা হাজির হয়ে লেনদেন নিষ্পত্তি করে থাকেন। এতে সময় ও ব্যয় বেশি লাগতো। তবে আজ থেকে আরটিজিএস পদ্ধতিতে ঝামেলা ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারছে ব্যাংককগুলো। পাঁচটি বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে চাইলে চীনা মুদ্রা ইউয়ান লেনদেন করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, চালু হওয়ার প্রথম দিন কয়েকটি ব্যাংক ৫২টি লেনদেন নিষ্পন্ন করেছে। যার অংকের পরিমাণ ১১ লাখ ডলার। প্রথম দিন শুধু মার্কিন ডলার লেনদেন হয়েছে। তবে ডলার সংকটের কারণে লেনদেন কম হয়েছে। আস্তে আস্তে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে।    

আরটিজিএস ব্যবস্থায় দেশীয় মুদ্রায় লেনদেন সীমা এক লাখ টাকা হলেও বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে তা নির্বিশেষে যেকোনো পরিমাণ লেনদেন করতে পারবেন। এতে করে উপকারভোগীর সংখ্যা অনেক বাড়বে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তির কার্যক্রম চালু করার কারণে একদিকে যেমন এ সংক্রান্ত লেনদেন নিষ্পত্তি সহজ, তাৎক্ষণিক ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে; অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ত্বরান্বিত হবে বলছে- কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আরটিজিএস বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে ৪ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এর আগে গত ২৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে।

নীতিমালায় বলা হয়, আরটিজিএস একটি স্বতন্ত্র লেনদেন প্ল্যাটফর্ম পদ্ধতি। এরসঙ্গে অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মের সংযুক্তি নেই। এ পদ্ধতিতে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য একটি বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব খুলতে হবে। এখান থেকে কেবল ডলারের বিপরীতে ডলারে, ইউরোর বিপরীতে ইউরো- এভাবে লেনদেন নিষ্পত্তি করা যাবে। অন্য এক মুদ্রার বিপরীতে অন্য বৈদেশিক মুদ্রায় নিষ্পত্তি করা যাবে না। তবে যে কোনো অংকের লেনদেন নিষ্পত্তিতে কোনো বাধা নেই।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পরিশোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীর অ্যাকাউন্টের ধরন উল্লেখ করতে হবে। একটি লেনদেনে ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০০ টাকা চার্জ নিতে পারবে। আরটিজিএস পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রায় আন্তঃব্যাংক তারল্য সুবিধা নেওয়া যাবে না। লেনদেন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে গাইডলাইনস ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন (জিইএফটি) মেনে চলতে হবে। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকে অর্থ পাঠানোর পর সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে সুবিধাভোগীর হিসাবে অর্থ দিতে হবে। এটি করতে না পারলে অর্থ ফেরত যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে আরটিজিএসের স্থানীয় মুদ্রায় নিষ্পত্তির নীতিমালা মেনে চলতে হবে।

দেশে ২০১৫ সাল থেকে চালু হওয়া আরটিজিএসে থেকে যেকোনো অংকের অর্থ পরিশোধ নিষ্পত্তিতে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড সময় লাগে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১১ হাজার শাখার বেশিরভাগই এ ব্যবস্থায় যুক্ত রয়েছে। গত জুলাইতে ৬ লাখ ২৩ হাজার লেনদেনের বিপরীতে ৪ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিষ্পত্তি হয়েছে। গত জুন থেকে যুক্ত হয়েছে ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এসআই/এসএম