বাজারে ডলার উধাও, মিললেও লাগছে ১১৯ টাকা
দীর্ঘদিন খোলা বাজারে ডলার বিক্রি করেন মজিদ মিয়া। সকালে ডলারের রেট কত জানতে চাইলে বলেন, এখন ডলার নেই, কেউ বিক্রি করলে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা রেট দেব। বিক্রির রেট কত জানতে চাইলে বলেন, না থাকলে রেট দেব কীভাবে।
একই কথা বললেন মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জের কর্মী মাহমুদ। তিনি জানান, আজ বাজারে ডলার নেই। কেউ কিনলে ১১৯ টাকা দিতে হবে। তাও ১ ঘণ্টা লাগবে। কারো কাছ থেকে এনে দিতে হবে।
বুধবার (১০ আগস্ট) খোলা বাজারের ডলার ব্যবসায়ী ও মানি এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট এমন বেশকিছু কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ মানি এক্সচেঞ্জেই এখন নগদ ডলারের সংকট চলছে। বিক্রির চেয়ে তারা কিনছে বেশি। তবে বিক্রি করার লোক নেই। আবার এতদিন যারা রাস্তায় ডলার কেনাবেচা করতেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ভয়ে তারাও সরাসরি কেনাবেচা করছেন না।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন>> কমছে আমদানি, ডলার নিস্তেজের আভাস
বুধবার কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ ডলার কিনতে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ১১৮ থেকে ১১৯ টাকা। সোমবার যা ছিল ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা। খোলা বাজারে সাধারণ গ্রাহক বিক্রি করলে প্রতি ডলার পাচ্ছে ১১৫ টাকা থেকে ১১৬ টাকা।
পল্টনের খুচরা ডলার ব্যবসায়ী বেলাল জানান, খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। তীব্র সংকট চলছে।
আব্দুর রশিদ নামে মতিঝিলের এক ডলার বিক্রেতা বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে থেকে এনে নগদ ডলার কেনা-বেচা করি। যারা বিদেশ যান তাদের খুচরা কিছু ডলার লাগে। ব্যাংকে গেলে বিভিন্ন ঝামেলা হয়। আমাদের কাছ থেকে সহজে ডলার কিনতে পারে। খুচরা ৫০, ১০০ থেকে ১০০০ ডলার কেনা-বেচা করি। যারা বিদেশ থেকে খুচরা ডলার নিয়ে আসেন তারা আমাদের কাছে বিক্রি করেন। আবার অনেকে ডলার নিয়ে বিদেশে যান, সব খরচ হয় না, তারাও ফেরত দেন। প্রতিদিন দুই তিন হাজার ডলার বিক্রি হয়। বাজার ভালো থাকলে এক দেড় হাজার টাকা পাই। এখন বাজারে ডলারের চাহিদা আছে। কিন্তু ডলার নেই। দামেরও ঠিক নেই। আবার ভয় আছে। আগে সরাসরি বিক্রি করলে কোনো সমস্যা হতো না। এখন পুলিশে ধরছে। তাই ব্যবসা করা সমস্যা।
তিনি জানান, আজ সকালে শুরুতে নগদ ডলার বিক্রি করেছি ১১৬ টাকায়। পরে আর ডলার নেই। এখন ১১৬ টাকায় ডলার পাচ্ছি না।
শুধু খোলা বাজারে নয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও ১০৮ থেকে ১১০ টাকার ওপরে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে।
দেশে খোলা বাজারে ডলার প্রথমবারের মতো ১০০ টাকার ঘর পেরিয়ে যায় গত ১৭ মে। এরপর আবার কমে আসে। পরে গত ১৭ জুলাই ফের ১০০ টাকা অতিক্রম করে।
এদিকে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের বর্তমান মূল্য ৯৫ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে।
মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। এ হিসাবে দেড় মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ৫৫ পয়সা।
এদিকে ডলার কারসাজির অভিযোগে গত সোমবার দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসাজির অপরাধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।
এসআই/জেডএস