২ কোটি করদাতার খোঁজে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সিটি করপোরেশনে এনবিআর
করযোগ্য ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনতে বিদ্যুৎ, গ্যাস আর সিটি করপোরেশনের ডাটাবেজ যাচাই করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর সংশ্লিষ্টদের ধারণা বিদ্যুৎ, গ্যাস আর সিটি করপোরেশনের ডাটাবেজ যাচাই করতে পারলে অন্তত দুই কোটি করদাতা বেরিয়ে আসবে।
বিজ্ঞাপন
যে কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের করদাতা শনাক্তে সহযোগিতা চেয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে চিঠিগুলো দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চিঠি ও এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ও দুটি সংস্থা রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো হলো- ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকো ও ওজোপাডিকো। আর দুটি সংস্থা হলো-পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবি। যেখানে সারাদেশে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা চার কোটি ১৯ লাখ। আর বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে চার লাখ ৮৬ হাজার। অন্যদিকে দেশে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানি রয়েছে ছয়টি। এগুলো হলো-তিতাস গ্যাস, কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। এখানে সারাদেশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণকারী প্রায় ৪৪ লাখ গ্রাহক।
অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটিকে ডিজিটাল সার্ভের আওতায় আনতেও উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। দুই সিটি করপোরেশনকে ডিজিটাল সার্ভের আওতায় আনতে পারলে এনবিআরের ধারণা সেখান থেকে অন্তত ৫০ লাখ করদাতা করনেটে চলে আসবে।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, টিআইএন রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হলেও আমরা এখনো কঠোর হচ্ছি না। আমরা চাই করদাতারা নিজ উদ্যোগে রিটার্ন দাখিল করুক। আমরা ডোর টু ডোর সার্ভে শুরু করেছি। আমরা সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সেবা প্রদানকারী সংস্থা থেকে সেকেন্ডারি ডেটা নিয়ে যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা করদাতা বাড়াতে চাই।
এর আগে করের আওতা বৃদ্ধি ও আয়কর ফাঁকি বন্ধ করতে মোটরযান ও নৌ-যান, সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্স এবং ঠিকাদার তালিকাভুক্তি কিংবা নবায়নে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করতে সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এনবিআর চেয়ারম্যান ২০২১ সালের ৩১ মার্চ এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠিগুলো দেয় বলে জানা গেছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, কর আদায়ের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে আয়কর রিটার্ন ও উৎসে কর কর্তন বেগবান করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ ১০টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এনবিআরের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোনো পণ্য সরবরাহ চুক্তি সম্পাদন ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কিংবা দরপত্র দাখিলে ইলেকট্রনকি ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বার (ই-টিআইএন) সার্টিফিকেট দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একইভাবে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও নবায়ন, নৌ-যান রেজিস্ট্রেশন ও নবায়ন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি ও নাবয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ই-টিআইএন সনদপত্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এসব সেক্টরগুলোকে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আয়কর রিটার্ন দাখিল থেকে বিরত থাকছেন। তারা রিটার্ন দাখিল না করেই রেজিস্ট্রেশন কিংবা নবায়ন করতে পারছেন। কিন্তু আয়কর আইন অনুসারে ই-টিআইএন থাকলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক বা দাখিল না করার সুযোগ নেই। কিন্তু ওই অসাধু চক্রটি আয় গোপন ও কর পরিহারের উদ্দেশ্যে রিটার্ন দাখিল থেকে বিরত থাকছেন। এ অবস্থায় দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারসহ উল্লেখিত সব ক্ষেত্রে সর্বশেষ করবর্ষের জমা দেওয়া আয়কর রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দাখিলের বাধ্যবাধ্যকতার নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করলে করনেট বৃদ্ধি পাবে। তাই ওইসব ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি।
বর্তমানে এনবিআর বিআরটিএ থেকে ডেটা নিয়ে গাড়ি মালিকদের আর জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের তথ্য যাচাই করছে। এতে সুফল আসতে শুরু করেছে বলে বলছেন কর্মকর্তারা।
চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
আরএম/জেডএস