জনগণ নিষ্পেষিত হলে সরকারের সব উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে : ক্যাব
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু উন্নয়নের মহাসড়কে জনগণ যদি নিষ্পেষিত হয় তখন কোনো উন্নয়নই আর উন্নয়ন হিসেবে বিবেচিত হবে না। সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অনলাইন সভায় সরকারকে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ক্যাবের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ মিজানুর রহমান (রাজু), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূ-তত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম প্রমুখ। সভার সঞ্চালনা করেন ক্যাবের প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি-অপচয়ের সব দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভর্তুকি কমানোর পথ বেছে নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ওয়াসা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও সেবার চেয়ে বাণিজ্যের দিকেই এর নজর এখন বেশি।
প্রতিবাদ সভায় সারাদেশ থেকে ক্যাবের জেলা কমিটির নেতারাও অংশ নেন। এ সময় তারা পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।
রাজশাহীতেও পানির দাম তিনগুণ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। অপরদিকে রমজানে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি রোধে সিলেট বিভাগে ক্যাবের বিশেষ পাইলট কর্মসূচিকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন সিলেট ক্যাব সভাপতি জামিল চৌধুরী।
ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের বোনাস পাওয়ার বিষয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যদি ভোক্তাদের ওপর বাড়তি মূল্যের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে লাভ দেখায়, সেই সব কর্মচারী বা কর্মকর্তারা বোনাস পাবার যোগ্য? না তিরস্কার পাওয়ার যোগ্য?
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনে কিছু আমলা রয়েছেন এবং তাদের সায় দিচ্ছেন কিছু রাজনীতিবিদ। যারা এই রাষ্ট্রকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করতে চাচ্ছেন। বিভিন্ন কাজে তারা সফলও হচ্ছেন।
গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু উন্নয়নের মহাসড়কে জনগণ যদি নিষ্পেষিত হয় তখন কোনো উন্নয়নই আর উন্নয়ন হিসেবে বিবেচিত হবে না, সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। তাই আমি অনুরোধ করব, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেন সর্বক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বস্তি প্রদান করেন।
ড. এম শামসুল আলম বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা মূল্যবৃদ্ধি সইতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভর্তুকি সরকার আর দিতে পারছেন না। আমরা তার সঙ্গে সমস্বরে বলতে চাই, আমরা এই মূল্যবৃদ্ধি আর সইতে পারছি না।
ওয়াসার এমডি ও কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি এবং বোনাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিখাত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বিশেষের বেতন বাড়াতেই পারে। যাকে দিয়ে যত বেশি আয় করা সম্ভব, তার তত বেশি বেতন বাড়িয়ে তারা সেই ব্যক্তির কর্মদক্ষতা বাড়ায়। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি করা যদি তার (ঢাকা ওয়াসার এমডি) দক্ষতা হয় এবং সেই দক্ষতার পুরস্কার স্বরূপ যদি বেতন বাড়ানো হয়, তাহলে আমাদের এই জায়গাটিতে আঘাত করতে হবে।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো সব সময় সরকারি এবং এর মালিক জনগণ। সরকার জনগণের পক্ষে কোম্পানির মালিকানা তদারকি করে। এখানে কোনো কোম্পানির বেতন-ভাতা সরকারি নিয়মের বাইরে হবে না, সরকারি নীতিমালা বা সরকারি নিয়মের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা হবে না। যারা পদাধিকার বলে বোর্ডের চেয়ারম্যান, তারা সভা করার কোনো ভাতা পাবেন না, কোনো টিএ-ডিএ থাকলে তা নেবেন সরকারের কাছ থেকে। কারণ সেখানে আমরা ট্যাক্স-ভ্যাট দেই। তেল, গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের মতো যেসব খাত লাভজনক নয়, যেসব খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে এবং সেই সমস্ত খাত সরকারি শুল্কমুক্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ খাতে এক লাখ কোটি টাকারও মজুদ ছিল, যা সরকার আইন করে নিয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের ৪৪ হাজার কোটি টাকা সমন্বয় না করে মুনাফা করেছে। এছাড়াও গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে বছরে এক-দেড় হাজার টাকা ভোক্তারা দিচ্ছেন, কিন্তু সেই টাকা গ্যাস উন্নয়নে বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেভাবে ব্যক্তিখাতে করে ঠিক সেভাবে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো এই অর্থ তছরুপ করছেন। তারা গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের সেই হিসেব দিতে পারেনি। অথচ বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে টাকা কাজে লাগে না, তার পরেও বাপেক্স ৪ টাকারও বেশি মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। যেখানে আইওসির গ্যাসের দাম ২ টাকা ৫০ পয়সা।
তিনি বলেন, সরকারের মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে যেন ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এসআই/ওএফ