রডের দাম বেড়েছে ৩৭%, তবুও লোকসান বলছেন উৎপাদকরা
টন প্রতি রডের দাম গত দুই মাসেই বেড়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। তারপরও লোকসান দিয়ে রড বিক্রি করতে হচ্ছে বলে দাবি করছেন উৎপাদকরা। কারণ বর্তমানে স্ক্র্যাপ কিনতে ৭৯ শতাংশ বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের।
সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫২ শতাংশ। বিপরীতে বিক্রয়মূল্য বেড়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশ। তাই বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির তুলনায় বিক্রয়মূল্য না বাড়ায় লোকসান দিয়ে রড বিক্রি করতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।
বিজ্ঞাপন
এ খাতের উদ্যোক্তারা জানান, গত দুই বছরে স্টিল তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও রাসায়নিকের দাম বৃদ্ধিসহ জাহাজ ও কনটেইনারের ভাড়া বেড়েছে। ফলে রডের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের নির্মাণ খাতেও। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের অবকাঠামো নির্মাণ কোম্পানিগুলো।
এ প্রেক্ষাপটে বুধবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)। সভায় সিদ্ধান্ত হয় এখন থেকে নির্মাণ খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তিন মাস পর পর বৈঠকে বসবে অবকাঠামো নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও কাঁচামাল উৎপাদকরা।
বিএসএমএর পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় দেশে উৎপাদিত রডের দাম যৌক্তিকভাবে বেড়েছে।
বর্তমানে স্ক্র্যাপ কিনতে ৭৯ শতাংশ বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫২ শতাংশ। বিপরীতে বিক্রয়মূল্য বেড়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশ।
উৎপাদকরা জানান, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির তুলনায় বিক্রয়মূল্য না বাড়ায় অনেক ক্ষেত্রেই লোকসান দিয়ে রড বিক্রি করতে হচ্ছে।
সভায় জানানো হয়, দেশে এখন প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার টাকায়। অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রতি টন রডের বিক্রয় মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৮৬ হাজার টাকা।
সভায় স্টিল উৎপাদকরা বলেন, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো রড আমদানি করার অনুমতি পেলে, দেশীয় শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা তৈরি হবে। এ অবস্থায় দেশীয় উৎপাদকদের জন্য স্ক্র্যাপ ও স্পঞ্জ আয়রন আমদানিতে বিদ্যমান সকল শুল্ক-কর হ্রাস করার দাবি জানায় বিএসএমএ।
সভায় বিএসিআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত বিধিমালা-পিপিআর ও সিপিটিইউ থেকে জারি করা পরিপত্রে সরকারি প্রকল্পগুলোতে মূল্য সমন্বয়ের কথা রয়েছে। কিন্তু সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত বেশিরভাগ প্রকল্পের চুক্তিতে মূল্য সমন্বয়ের ক্লজ রাখা হয়নি। যে কারণে, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায়, ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারি প্রকল্পের চুক্তি মূল্য বাড়ানোর আহ্বান জানায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। পারস্পরিক সহযোগিতা ও আলোচনার মাধ্যমে নির্মাণ খাতের সমস্যা নিরসনের তিনি তাগিদ দেন।
সভায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন। অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মেদ আলমগীর, মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, বিএসএমএর সভাপতি মানোয়ার হোসেন ও বিএসিআইয়ের সভাপতি শফিকুল হক তালুকদার।
এসআই/এসকেডি