বন্দিশালার নান্দনিক সৃষ্টিতে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর। দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও সন্ধ্যার পরে ঢল নামে। বরাবরের মতো এবারও মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কুটির শিল্প ও হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়ন। এরই ধারাবাহিকতায় মেলায় শুরুতেই সাড়া ফেলেছে দেশের ৬৮টি কারাগারের বন্দিদের তৈরি কারাপণ্য। এ প্যাভিলিয়নের দৃষ্টিনন্দন কুটিরশিল্প, তাঁতের শাড়ি, কাঠ, বাঁশ ও বেতের পণ্যে মুগ্ধ ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে সরেজমিনে মেলাপ্রাঙ্গণ গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই ডান পাশে ‘কারাপণ্য প্যাভিলিয়ন’। কয়েদিদের হাতে তৈরি বিপুল পণ্যের সমাহার। সুতা, বাঁশ, কাঠ, প্লাস্টিক, পাট, বেত, পুঁতিসহ প্রায় দুই শতাধিক পণ্যে সাজানো হয়েছে প্যাভিলিয়ন। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীদের তৈরি জামদানি শাড়ি; যশোর জেলা কারাগারে বন্দীদের তৈরি নকশি কাঁথা, বাঁশের ডালা, নারিকেলের শলার ফলের ঝুড়ি, বেতের তৈরি মোড়া, বেকারি পণ্য; নাটোর জেলা কারাগারের বন্দিদের তৈরি নকশি কাঁথা, বেতের মোড়া; দিনাজপুর জেলা কারাগারের শতরঞ্চি; চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও কুমিল্লা জেলা কারাগারের কাঠের চেয়ার, শো-পিস; কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের লুঙ্গি, গামছা ও চাদরের কাটতি বেশি। সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত পণ্য রয়েছে কারাপণ্যের এই প্যাভিলিয়নে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও বন্দিদের তৈরি চটের ব্যাগ, নারিকেলের কয়ার পাপোশ, চুড়িদানি, বেতের দোলনা, চুড়ি, ওয়ারড্রোব, ফোল্ডিং চেয়ার, পুঁতির কলমদানি ও ব্যাগের চাহিদাও ব্যাপক। হাতে তৈরি এসব পণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সাধারণ ক্রেতারা।
আফজাল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, কারাবন্দিরা এতকিছু তৈরি করে সেটি আমার জানা ছিল না। এটি চমৎকার লেগেছে। বন্দিদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য আরও বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করলে হয়তো তারা এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন। এসব পণ্যের দামও হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
রাজধানীর মালিবাগ থেকে পরিবারসহ মেলায় ঘুরতে আসা গৃহিণী আফরোজা বেগম বলেন, কারা প্যাভিলিয়ন ঘুরে আমি সত্যিই অভিভূত। কারাবন্দিরা এতসব পণ্য তৈরি করছে সেটি প্রশংসার পাওয়ার মতো। এভাবে যদি দেশের প্রতিটি কারাগারে বন্দিদের কর্মসংস্থান তৈরি হয় তবে কারাগার সংশোধনাগারে পরিণত হবে। সবগুলো পণ্যই দৃষ্টিনন্দন। যেসব পণ্য বাইরে হাজার টাকায় পাওয়া যায় এখানে তা কম টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আবার মান বেশ ভালো।
প্যাভিলিয়নের বিক্রয় প্রতিনিধিরাও জানান মেলা উদ্বোধনের পর থেকেই খুব ভালো সাড়া মিলছে। কখনোই প্যাভিলিয়ন ফাঁকা থাকছে না। বেচা-কেনাও বেশ ভালো।
বিক্রয়কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এ বছর বাঁশ, বেত ও পুঁতির তৈরি পণ্যেই ক্রেতারা আগ্রহী। এছাড়াও মোড়া, বাঁশের ডালা ও চালনি, ফুল ও ফলের ঝুড়ি, বাঁশের তৈরি ফুড কভার, নকশিকাঁথা, জামদানি শাড়ি ও পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ব্যাগও ভালো বিক্রি হচ্ছে।
মূলত সংশোধন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে উৎপাদিত এসব কারাপণ্যের লাভের অর্ধেক অর্থাৎ শতকরা ৫০ শতাংশ কারাবন্দিদেরই দেওয়া হয় বলে জানান প্যাভিলিয়নে কর্মরত বাংলাদেশ জেলের হিসাবরক্ষক মাসুদ মিয়া।
তিনি বলেন, কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সংশোধন ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কারাগারগুলোতে কুটির ও হস্তশিল্পের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রিন্টিং, চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি, নারীদের জন্য বিউটিফিকেশন, রেডিমেড পোশাক জামদানি তৈরির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ শেষে সারা বছর বন্দিদের হাতে তৈরি এসব পণ্যই বাণিজ্য মেলায় বিক্রির জন্য আনা হয়। মেলার শুরু থেকেই আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। স্টলে ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী শিফট ভিত্তিক ডিউটি করে যাচ্ছি। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরো বাড়বে।
আরএইচটি/ওএফ