ওমিক্রনে কমেছে অর্ডার-রফতানি, শঙ্কায় পোশাক মালিকরা
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের পোশাক খাতে। ফলে অক্টোবর ও নভেম্বরের তুলনায় গেল বছরের ডিসেম্বরে রফতানি অর্ডার কমেছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে খুব বেশি অর্ডারও আসেনি।
শুধু তাই নয়, অর্ডার দেওয়া পণ্য নিতে বিলম্ব করছেন ইউরোপ-আমেরিকার বায়াররা। ফলে দুশ্চিন্তায় পোশাক মালিকরা। কারণ যত বিলম্ব হবে, ততই নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না তারা।
বিজ্ঞাপন
ইপিবির তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্টে ১১ দশমিক ৫৬, সেপ্টেম্বরে ৪১ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ৫৩ দশমিক ২৮, নভেম্বরে ৩২ দশমিক ৩৪ ও ডিসেম্বরে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়। বর্তমানে চার বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করছে। মালিকদের টার্গেট আট বিলিয়ন ডলার রফতানি করার।
পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানসহ ইউরোপে ওমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। অনেক স্থানে পোশাক বিক্রির দোকান ও আউটলেট বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বায়াররা করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা পোশাক পণ্য গ্রহণে ‘ধীর’ নীতি অবলম্বন করেছেন।
অন্যদিকে, কারখানা মালিকরা বায়ারদের অর্ডার নেওয়ার পর কাঁচামাল কিনে ফেলেছেন বা কিনতে শুরু করেছেন। ফলে বায়ারদের অর্ডার নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মালিকরা। তারা বলছেন, অর্ডার নিলেই তো হবে না, রফতানিও তো করতে হবে।
শঙ্কার কথা জানিয়ে এ কে জে ফ্যাশনস ফেব্রিকস লিমিটেডর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘ওমিক্রনের কারণে অর্ডার দেওয়া পোশাক পণ্য রফতানিতে অন্তত চার-পাঁচ দিন করে দেরি হচ্ছে। নতুন অর্ডারও কম আসছে।’
এবিসি নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলসের চেয়ারম্যান ও এমডি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে খুব বেশি সমস্যা হবে না। কিন্তু এটি যদি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে তাহলে পোশাক খাতের অনেক ক্ষতি হবে। আমরা সেই শঙ্কায় আছি।’
ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড ও বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ওমিক্রনের কারণে বায়াররা ডেলিভারি স্লো করে দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত দেশের পোশাক খাতে কোনো অর্ডার বাতিল হয়নি।’
প্রায় একই কথা বলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত পোশাক আমদানি-রফতানির পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। রফতানি কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে, বায়ারদের পক্ষ থেকে কোনো অর্ডার স্থগিত বা বাতিল হয়নি।’
ক্ল্যাসিক ফ্যাশন কনসেপ্টের এমডি ও বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘ওমিক্রনের কারণে গত ডিসেম্বর থেকেই অর্ডার কমে আসছে। অর্ডার এখন কমলেও আমাদের সমস্যা নেই। কারণ আমাদের কাছে যে অর্ডার রয়েছে, তা দিয়ে জুন পর্যন্ত কাজ করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘তবে বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে, বায়াররা অর্ডার দেওয়া পণ্য নিতে বিলম্ব করছেন। তাতে পেমেন্ট দেরিতে হবে, পেমেন্ট দেরিতে পেলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে। শুধু তাই নয়, ওমিক্রন যদি আরও বিস্তার লাভ করে, এরপর বায়ারা অর্ডার স্থগিত করলে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হব। তার কারণ ইতোমধ্যে কাঁচামাল চলে এসেছে, পোশাকও প্রস্তুত হয়ে যাবে। আর প্রস্তুত করা পণ্য রফতানি করতে না পারলে টাকা পাওয়া যাবে না।’
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘ওমিক্রন ও ক্রিসমাসের কারণে এখন নতুন অর্ডার স্লো রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে অর্ডার রয়েছে সেগুলো সামাল দিতে পারছি না। পরিবেশ এখনো আমাদের অনুকূলে রয়েছে। আশা করছি, ভালো থাকবে।’
তবে বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে, বায়াররা অর্ডার দেওয়া পণ্য নিতে বিলম্ব করছেন। তাতে পেমেন্ট দেরিতে হবে, পেমেন্ট দেরিতে পেলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে। শুধু তাই নয়, ওমিক্রন যদি আরও বিস্তার লাভ করে, এরপর বায়ারা অর্ডার স্থগিত করলে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হব
ইপিবির তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্টে ১১ দশমিক ৫৬, সেপ্টেম্বরে ৪১ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ৫৩ দশমিক ২৮, নভেম্বরে ৩২ দশমিক ৩৪ ও ডিসেম্বরে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়। বর্তমানে চার বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করছে। মালিকদের টার্গেট আট বিলিয়ন ডলার রফতানি করার।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্র বলছে, করোনার প্রথম বছর ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ বেশিরভাগ দেশে তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। তাতে ২০২০ সালের শেষের দিকে শুরু করে ২০২১ সালে এসব দেশের অর্ডারগুলো বাংলাদেশমুখী হয়। ফলে ওভেন ও নিটওয়ার কারখানাগুলোতে চাহিদার অনেক বেশি অর্ডার রয়েছে। এসব অর্ডার তৈরির কাজ চলছে। অনেক অর্ডার প্রস্তুত শেষে রফতানির পর্যায়ে রয়েছে। ঠিক সেই সময় ওমিক্রনের খবরে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এমআই/ওএফ