স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর শুল্কমুক্ত অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ। ফলে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এ তাগিদ দেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এখন বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই বাণিজ্য হয় ছয়টি ব্লকের মধ্যে। তাই রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি), ইউরোপীয় ইকোনমিক ইউনিয়ন, ইউএসএ, ইইউ, ইউকে ও আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট, এ ছয়টি ব্লকের সঙ্গে এফটিএ করা জরুরি।

দেশে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এ অবস্থায় মহামারির তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধে সরকারি আরোপিত বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, মহামারি প্রতিরোধে লকডাউন কোনো সমাধান নয়, বরং এতে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি। বর্তমানে দেশের রফতানি শিল্পে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। কাজও হচ্ছে। এ মুহূর্তে লকডাউন দেওয়া হলে ব্যবসায় অনেক ক্ষ‌তি হয়ে যা‌বে। তাই লকডাউন না দিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

ব্যবসায়ী‌ ও শিল্প উদ্যোক্তাদের এ নেতা বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃ‌ষ্টি হ‌চ্ছে। আগামীতে আমাদের জীবনে কো‌ভিড একটা‌ পার্ট হ‌য়ে দাঁড়াচ্ছে। এটাকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে, করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

জসিম উদ্দিন বলেন, যেসব দেশ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসব দেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। তাই লকডাউন না দিয়ে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলাই এ মহামারি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এতদিন বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব। কিন্তু এখন পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে দেশে বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে আরও বেশি ঋণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতির বড় অংশ এসএমই খাত। এ‌ খাতকে সহায়তা না কর‌তে পারলে অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া যাবে না। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে এসএমই খাত যথাযথ ঋণ সুবিধাও পায় না। তাই সরকারের উচিত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখার বিধান করার।

এলডিসি উত্তর সময়ে দরকষাকষির জন্য বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে এফবিসিসিআই ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এফবিসিসিআইয়ের নিজস্ব গবেষণা সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন খাতের ১৮ জন বিশেষজ্ঞকে প্যানেল উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের বিশ্লেষণ ও মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআই আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। উন্নয়নশীলে দেশে রূপান্তর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ, গ্লোবাল মার্কেট অ্যাক্সেস ২০২১-২০২৬, টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ ব্যবস্থা ও টেকসই রফতানি উন্নয়ন, ভর্তুকি ও প্রণোদনা শীর্ষক চারটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।

এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সরকারের বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বেসরকারি খাতের। কিন্তু এসব নীতি প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। তাই বাস্তবায়নের সময় ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তাদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়। তাই নীতি প্রণয়নের আগে খাত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করার ও নীতির প্রভাব মূল্যায়নের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাবীব ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি প্রমুখ।

এসআই/এসকেডি