সোয়ান গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তে মোট ১৩৬ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির হিসাব গোপন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই অভিযোগে তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক তিন মামলা দায়ের হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সোয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ফোম), সোয়ান কেমিক্যালস লিমিটেড এবং রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত সোয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ম্যাট্রেস)। প্রতিষ্ঠান ৩টি মূলত ফোম, ম্যাট্রেস, কেমিক্যালস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করে।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রকৃত সেবা বিক্রি গোপন করে চালান ছাড়া সেবা সরবরাহ করে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে এমন অভিযোগে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল হকের নেতৃত্বে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান শেষে তিন প্রতিষ্ঠানের মোট ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি ধরা পড়ে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভ্যাট আদায়ের আইনগত পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়ার জন্য দুটি মামলা ঢাকা উত্তর ও অন্যটি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হবে।

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা যায়, অভিযানে গোয়েন্দা দল দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিল দেখানোর অনুরোধ করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণ করা তথ্য যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিল লুকানো অবস্থায় আটক করা হয়।

তদন্ত অনুসারে সোয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ফোম) প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১০৫ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৮ টাকার পণ্য বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল (গাজীপুর-৩) এ মাসিক রিটার্নে  মাত্র ৩১ কোটি ১৬ লাখ ৪ হাজার ২৩৪ টাকা বিক্রির হিসাব দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ৭৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৪ টাকার তথ্য গোপন করেছে। যেখান ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ১১ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৮৯৬ টাকা।

অন্যদিকে সোয়ান কেমিক্যালস লি. একই সময়ে মোট বিক্রি করেছে ৪৭ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৩৯ টাকার পণ্য। তদন্তে জমা দেওয়া ভ্যাট রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রির পার্থক্য পাওয়া যায় ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ১৯ হাজার ৪১৭ টাকা। আর ভ্যাট ফাঁকি ২ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ৯১৩ টাকা।

এছাড়া সোয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ম্যাট্রেস) প্রতিষ্ঠানটিও ওই একই সময়ে ৪৩ কোটি ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬২ টাকার বিক্রির তথ্য গোপন করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে প্রতিষ্ঠানটি ৬ কোটি ৫৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।

এভাবে তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান তিনটির মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ২০ কোটি ৪০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ টাকা। ২ শতাংশ হারে সুদ বাবদ ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ২০৫ টাকা যোগ করলে মোট ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার ৬৯৮ টাকার ফাঁকি পাওয়া যায়।

আরএম/জেডএস