করোনার মহামারির পর বাংলাদেশে আরও বেশি মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজকে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সেবার আওতায় আনার জন্য ঋণ দেওয়ার নিয়ম আরও সহজ করবে ফিনান্সিয়াল টেকনোলজি (ফিনটেক)। 

সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) আয়োজিত একটি গোলটেবিলে এসব তথ্য জানানো হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইসিএমের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টালিখাতার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহাদাত খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইসিএময়ের পরিচালক (স্টাডিজ) ওয়াজিদ হাসান শাহ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুবর্ণ বড়ুয়া।
 
মূলপ্রবন্ধে ড. শাহাদাত খান বলেন, ঋণ দেওয়ার জন্য মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজের যে ধরনের তথ্য দরকার তা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পায় না। ফলে তাদের ঋণ দিতে পারে না। মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজের ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে এখন সহজেই তাদের ঋণ দেওয়া সম্ভব।
 
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট এখন সবার হাতের নাগালে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করছে। এতে তৈরি হয়েছে এক বিশাল এক তথ্যভাণ্ডার। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে ফিনটেক এর মাধ্যমে সবাইকে ঋণের আওতায় আনা সম্ভব। ঋণের পরিমাণও নির্ধারণ করা যাবে। গ্রহীতার কাছে না গিয়েও ঋণের টাকা পাঠানো ও কিস্তির টাকা আদায় করা যাবে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা খরচ ও ঝুঁকি কমবে।

বিআইসিএমের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, দেশের প্রান্তিক অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে কমিউনিটি ভিত্তিক অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ।

মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী বলেন, ছোট ব্যবসায়ীদের লোন দরকার হয় ব্যবসা শুরু করার জন্য নয় বরং ব্যবসা বৃদ্ধি করার জন্য। তবে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে নানান অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার সমস্যাটি প্রায় স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত রয়েই গিয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজের ভূমিকাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি নিরুপন মডেল তৈরি করে উচ্চ ঝুঁকি আলাদা করা ও লেনদেন খরচ কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মেজবাউল হক বলেন, ফিনটেক, ব্যাংক, এমএফআই, এন্টারপ্রাইজ সবাই মিলে ইকো-সিস্টেম তৈরি করতে হবে। কম খরচে সেবা দেওয়ার জন্য ফিনটেকই হবে অন্যতম প্লাটফর্ম।
 
এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরিতে ফিনটেক আবশ্যক এবং প্রান্তিক জনগন যারা ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারে না তাদের শেষ ভরসা এমএফআই।

আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজীম হাসান সাত্তার, ইনস্টিটিউট অব ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের রিসার্চ ফেলো ড. ফারহানা নার্গিস, ব্যাংক এশিয়ার এমএসএমই ও কৃষিঋণ বিভাগের প্রধান সামিনুর রহমান, এসিআইয়ের ট্রেজারি প্রধান আবু হাসান জামান, ব্রাক এর রিসার্চ ও ইনসাইটের প্রধান জুমানা আসরার, পিওপিআইয়ের পরিচালক মশিউর রহমান, উদ্দীপনের নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল খালেক, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাফিউদ্দিন আহমেদ, আমেরিকার লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ইব্রাহিম সিরাজ প্রমুখ।

এমআই/আইএসএইচ