আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে কী কী সমস্যা হতে পারে
শাহাজালাল মৃধা (ছদ্দ নাম)। ব্যবসার প্রয়োজনে ২০১৫ সালে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) গ্রহণ করেন। করযোগ্য আয় করলেও কিন্তু তিনি কখনোই আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি।
ব্যবসাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে মোটা অংকের আয় আসতে থাকে। তার সঞ্চয়ী একটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৪ কোটি টাকা জমা হয়। করযোগ্য আয়ের প্রমাণ পাওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ২০১৯ সালে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়। কিন্তু তিনি তা আমলে নেননি।
বিজ্ঞাপন
ফলসরূপ তার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে রিটার্ন জমা দিলেও ওই টাকার যথাযথ হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়া ও আইনি জটিলতায় এখন পর্যন্ত ওই টাকা উত্তোলন করতে পারেন নাই শাহজালাল মৃধা। এমনকি ওই ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করারও অনুমতি মিলেনি।
শাহজালাল মৃধার মতো কোনো টিআইএন ধারী করদাতা যদি বিপদে পড়তে না চান তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এনবিআরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির আয়কর বিভাগ।
একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্যাবলি নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি হয়; তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। তবে এছাড়াও আরও অনেক কারণে ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
এনবিআরের ২০২১-২২ অর্থবছরের আয়কর নির্দেশিকা অনুসারে মোট ২২ কারণে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। আর যদি করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হন তাহলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪, ৭৩ ও ৭৩এ ধারা অনুযায়ী জরিমানা, ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপযোগ্য হবে।
করদাতাদের উদ্দেশ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম এ বিষয়ে বলেন, আয়কর আইন অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আইনগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও আপাতত আমরা কঠোর হচ্ছি না। আমরা চড়াও হয়ে করদাতাদের আইনের আওতায় আনতে চাচ্ছি না। আমরা চাই, করদাতারা নিজেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের সহযোগিতা গ্রহণ করুক। আমাদের স্ব-স্ব ট্যাক্স জোন থেকেও প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। করদাতাদের নোটিশ করে রিটার্ন দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
রিটার্ন জমা না দেওয়ার বিষয়ে আয়কর আইন কি বলছে?
প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সর্বশেষ সময় ৩০ নভেম্বর। ওই দিনকে আয়কর দিবসও বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। কেউ এ সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে লিখিত আবেদন করে সময় নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে নির্ধারিত করের সঙ্গে প্রতি মাসে আরও ২ শতাংশ সুদ দিতে হয়। কিন্তু সময়ের আবেদন না করে কেউ রিটার্ন না নিলে সুদের পাশাপাশি আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাকে জরিমানা দিতে হয়। ১ ডিসেম্বর থেকে এ জরিমানার তারিখ গণনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারায় বলা আছে, করদাতা যদি কোনো কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করেন, আবার এজন্য অনুমোদনও না নেন, সে জন্য তার পূর্ববর্তী বছর প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা ১ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় অংক ওই পরিমাণ অর্থ জরিমানা হবে। সেই সঙ্গে যতদিন দেরি হবে, প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে বাড়তি মাশুলও গুণতে হবে।
৭৩-এ ধারায় বলা আছে, ৩০ নভেম্বর পর কর কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে দেরিতে রিটার্ন জমা দিলেও ২ শতাংশ বিলম্ব সুদ দিতে হবে।
আরএম/এসএম