দু’একজনের জন্য আমরা সবার গালি শুনতে চাই না
পেঁয়াজের শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই পেঁয়াজের দাম একদিনে কেজিতে ১৫ টাকা কমেছে। এর মানে পেঁয়াজের দামে কারসাজি ছিল।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এ কথা বলেছেন। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, সুযোগ পেলেই দাম বাড়াবেন না।এটা আমাদের জন্য খুবই অসম্মানের। আমরা ব্যবসা করবো, দুই একজন লোকের কারণে আমরা সবার গালি শুনতে চাই না।
বিজ্ঞাপন
আজ (রোববার) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার শুল্ক কমানোর ঘোষণা করলো, সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা কমে গেল। এখানে সমস্যা ছিল। তা না হলে একদিনে কিভাবে এত দাম কমলো। এভাবে চলবে না- এটা ম্যাসেজ। আমরা সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাই। যদি কোনো সমস্যা থাকে আমাদের জানাবেন। আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করবো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি। কিন্তু বাস্তবে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখছি। তাই বিবিএসের তথ্য সঠিক কি না এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে পাইকার ও আড়ৎদাররা জানান, ভারতে অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। ফলে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশেও দাম বেড়েছে। তাহলে শুল্ক কমানোর ঘোষণার একদিনের মধ্যে হঠাৎ কেন দাম কমলো এফবিসিসিআই সভাপতির এমন প্রশ্নের কোনো যুক্তি সংগত কোনো উত্তর দিতে পারেননি পাইকাররা।
পেঁয়াজের দামের ক্ষেত্রে দেখা যায় কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারের তুলনায় কাঁচাবাজারগুলোতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি রাখা হয়। এ বিষয়ে গুলশান কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী বলেন, দোকান ভাড়া বেশি, বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট ১৭ থেকে ১৮ টাকা দিতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সের খরচ ৫০০ টাকা থেকে এখন ৩০০০ টাকা দিতে হয়। দোকানের চেয়ে এখন রাস্তায় ভ্যান গাড়িতে বেশি বেচাকেনা হয়।
এ সময় পেঁয়াজের আড়তদার ও আমদানিকারকরা দাম বৃদ্ধি ও কমার পেছনে নানা যুক্তি দেন। পেঁয়াজ পরিবহনে চাঁদাবাজি, ভারতে বৃষ্টি এবং সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে। এসময় বাড়তি বিদ্যুৎ বিল আদায়ের পক্ষে, বাজার সমিতির বিভিন্ন ব্যয়ের যুক্তি তুলে ধরেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, দোকানিদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল নেওয়ার কাজ মালিক সমিতির নয়। এ দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির।
এ ব্যাপারে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ীদের এমন আরও কোনো সমস্যা থাকলে তা এফবিসিসিআইকে জানানোর আহ্বান করে তিনি জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যক্রম শুরু হবে। কমিটিগুলো ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করবে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি এম এ মোমেন, আমিনুল হক শামীম, মো. হাবিব উল্লাহ ডন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি সিআইপি মো. রেজাউল করিম রেজনু।
এছাড়াও বাজার পরিস্থিতির ওপর আলোচনা করতে উপস্থিত ছিলেন চাল ও পেঁয়াজের আমদানিকারক, আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি ও রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সমিতির ব্যবসায়ী নেতারা।
এসআই/এনএফ