তেলে ১০০ টাকা বাঁচাতে রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা
ভর দুপুর। রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় টিসিবির ট্রাকের পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন আলমগীর হোসেন। কড়া রোদ ও ভ্যাপসা গরমের মধ্যে এক ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে কিনলেন দুই লিটার তেল, পেঁয়াজ, চিনি ও ডাল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তেলের দাম বেড়েই চলছে। বাজারে এক লিটার তেল কিনতে দেড়শ টাকা লাগে। এখানে দুই লিটারের তেলের বোতল দুইশ টাকা নেয়, বাজারের চেয়ে ১০০ টাকা কম-তাই লাইনে দাঁড়িয়ে কিনলাম।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে আক্ষেপ প্রকাশ করে আলমগীর হোসেন বলেন, আমি মতিঝিল ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করি। লকডাউনে ব্যবসা একেবারে বন্ধ ছিল। এখন চালু হয়েছে কিন্তু আগের মতো আয় নেই। দোকান ভাড়া ও খরচ বাদ দিয়ে দিনে ৪০০/৫০০ টাকার মতো থাকে। বাসা ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে হয়। ছেলে-মেয়েসহ পাঁচ জনের পরিবার। প্রতিদিন সংসারে কমপক্ষে দেড় কেজি চাল লাগে। এখন চাল কিনতেই ৯০ টাকা লেগে যায়। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। তেল দেড়শ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা। মাছ-মাংসের কথা বলে লাভ নেই। সব জিনিসের দাম বেশি। প্রতিদিন খাবারেই ৩০০/৪০০ টাকা লেগে যায়। কীভাবে যে চলছি আল্লাহ ভালো জানে।
বিজ্ঞাপন
শুধু আলমগীর নয়, বাজারে তেল-পেঁয়াজের লাগামহীন দামের কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের হাজারো মানুষ এখন টিসিবির পণ্যের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলে ন্যায্যমূল্যে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা, চিনি ও ডাল প্রতিকেজি ৫৫ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হয়।
ফকিরাপুল এলাকায় টিসিবির ট্রাকের পণ্য বিক্রেতা তানভীর বলেন, বাজারে তেল-পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন পণ্যের অনেক চাহিদা। সব জায়গায়ই মানুষের লাইন। এক সময় পণ্য নিয়ে বসে থাকতে হতো। এখন যত পণ্যই আনি, তিন চার ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এরপরও অনেকে পণ্য পায় না। আজকে ৪০০ লিটার তেল পাইছি। তার মানে ২০০ জন নিতে পারবে। এর বেশি দেওয়া সম্ভব না।
এদিকে দফায় দফায় বেড়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৫৩ টাকা নির্ধারণ করে। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ভোজ্যতেলের সর্বোচ্চ দাম ছিল ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে। ওই সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকায় উঠেছিল। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫২-১৫৫ টাকায়। দুই লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়। আর পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২৮ টাকায়। এছাড়া বাজারে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৮ টাকায়, পামওয়েল ১৩৫-১৪০ টাকায়।
মুগদার মুদি ব্যবসায়ী আল-আমিন জানায়, তেলের বাজার অনেকদিন ধরেই চড়া। এখন তীর ব্র্যান্ডের এক লিটার বোতল বিক্রি করছি ১৫০ টাকা আর পাঁচ লিটার ৬৯০ টাকা। বোতলের গায়ের রেট আরো বেশি। পাঁচ লিটারের রূপচাঁদা ৭২০ টাকা। এক বছর আগে পাঁচ লিটারের বোতল ৫০০ টাকার নিচে বিক্রি করেছি। বছরের ব্যবধানে সয়াবিন তেল লিটারে ৫০ টাকা বেড়েছে বলে জানান এ মুদি ব্যবসায়ী।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন রাজধানীতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫৫ টাকায়, যা এক মাস আগেও ছিল ১৪০-১৫৫ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে লিটার প্রতি বেড়েছে ৫ টাকা, এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৪৫ টাকা। ২০২০ সালের একই সময়ে দাম ছিল ১০০-১১০ টাকা লিটার।
খোলা সয়াবিন তেল ১৩৫-১৪০ টাকায়, যা এক মাস আগেও ছিল ১২৬-১৩৫ টাকা। মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেল লিটারে বেড়েছে ৫ টাকা ৩৬ পয়সা, এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫২ টাকা। পামওয়েল বর্তমানে ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে ছিল ১১৮-১২৫ টাকা। আর এক বছর আগে দাম ছিল ৮২-৮৪ টাকা।
এসআই/জেডএস