ভুয়া ভোটারের অভিযোগে বিতর্কে বিজিএপিএমইএর নির্বাচন
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনটির একাধিক সদস্যের অভিযোগ ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে’ নতুন ভোটার তালিকায় অনেককে যুক্ত করা হয়েছে।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, অযোগ্য কাউকে ভোটার করা হয়নি। এ বিষয়ে কারো অভিযোগ থাকলে আপিল বিভাগকে লিখিত জানানো সুযোগ আছে। এমন কোনো তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
বিজিএপিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিজিএপিএমইএর নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ও নির্বাচনী বোর্ডের দুই সদস্য এম কাওছারুজ্জামান এবং মো. ইসমাইল চৌধুরী বাদল নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী দুই বছর ( ২০২১-২৩ ) মেয়াদে আগামী ৬ নভেম্বর ঢাকায় ১৬টি পরিচালক পদ এবং চট্টগ্রামে ৫টি মিলিয়ে মোট ২১টি পরিচালক পদে সরাসরি গোপন ব্যালটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৪ অক্টোবর, ওই দিনই মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিচালক নির্বাচন শেষে সভাপতিসহ ৫টি শীর্ষ কর্মকর্তা পদে আগামী ৮ নভেম্বর নির্বাচিত পরিচালকদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ১৪ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ফলাফল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
আসন্ন এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভুয়া ভোটার যুক্ত ও অনেক সদস্যকে ভোটার না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন সদস্যরা।
জানা গেছে, সদস্য হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও বিজিএপিএমএর ভোটার হয়েছে অনেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রেডিং ফার্ম। আদৌ তারা গার্মেন্টস এক্সেসরিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নয়। বিষয়টির সঙ্গে পরিচালনা পরিষদের অনেকে জড়িত। কিন্তু তারা কোনোমতেই সাধারণ সদস্যদের এসব অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না। নির্বাচন কমিশনাররাও ভুয়া ভোটার বিষয়টি আমলে না নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের যে একটি আবহ প্রথমবারের মতো তৈরি হয়েছিল তা ম্লান হতে চলেছে।
১৯৯১ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর ৩০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে দুটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত কী হয় তা এখন সময়ই বলে দেবে।
এ বিষয়ে বিজিএপিএমইএর সহসভাপতি ও কসমো গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন হায়দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে অনেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ট্রেডিং হাউজকেও ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। অনেক ভুয়া ভোটার আছে। কারো ট্রেড লাইসেন্স এক জায়গায়, ফ্যাক্টরি আরেক জায়গায়, ঠিকানা ঠিক নেই। অনেকের ফ্যাক্টরি নেই। ৬০০ সদস্যর মধ্যে এমন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন ভুয়া ভোটার রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আমরা বলেছি, মেইল দিয়েছি কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো যাচাই বাছাই করছে না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজিএপিএমইএর এ সহসভাপতি বলেন, এখন যে নির্বাচনী বোর্ড আছে তাদের ৯০ দিনের জন্য গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে ২০০ দিন পার হয়ে গেছে। এর অর্থ বর্তমান নির্বাচন বোর্ডেরই বৈধতা নেই।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী চাঁদা পরিশোধ করলে এ সংগঠনের ভোটার হওয়া যায়। অনেক সদস্য তাদের চাঁদা পরিশোধ করেছেন কিন্তু তারা ভোটার হতে পারেনি। আমরা বারবার বিষয়টি জানিয়েছি কিন্তু কোনো অভিযোগই আমলে নেয়নি কমিশন।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনোরকম অনিয়ম করে ভোটার তৈরি করা হয়নি, যা কিছু করা হয়েছে তা ট্রেড অর্গানাইজেশন রুলস অনুযায়ী করা হয়েছে। ওই আইনে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করছি। এখন কোনো সদস্য যদি মনে করেন
যে এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাহলে আমাদের নির্বাচনী আপিল বোর্ড রয়েছে; সেখানে যে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আপিল বোর্ড শুনানি করবে এবং এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব, যদি কোনো ভুয়া ভোটার থাকে তাহলে বাদ দেবো।
নিয়ম অনুযায়ী কমিশন গঠনের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। অনেকের অভিযোগ ২০০ দিন পর হওয়ার পরও নির্বাচন দিতে পারেনি কমিশন এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগটি যাদের তারা না জেনেই করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি নির্দেশনায় ট্রেড অর্গানাইজেশন নির্বাচনের জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। বিজিএপিএমইএর বর্তমান কমিশন ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করবে।
এসআই/এসকেডি