সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সাতটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ক্রয়-প্রস্তাবগুলোর মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৮৭৪ কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার ৯১২ টাকা। বিশ্বব্যাংক ও দেশীয় ব্যাংকের ঋণ থেকে ৩০৫ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ১৫৮ টাকা ব্যয় করা হবে।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়ালি সভায় কমিটির প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৮তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৪তম সভা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ৭টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২টি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল।

গত ২২ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ২টি প্রস্তাবের প্রতিটিতে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ করে মোট ৬৭ লাখ ২০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি গ্যাস আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রস্তাবে প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ৩৫.৮৯৩২ ডলার এবং অন্যটির প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ৩৬.৯৫ ডলার। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে গড়ে ৬ ডলারের বেশি ব্যয় হবে।

সভায় রাশিয়া থেকে সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ১ লাখ মেট্রিক টন গম সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানির প্রস্তাব গত মাসের ২৯ তারিখের সিসিইএ সভায় অনুমোদিত হয়। দেশটির সঙ্গে জি টু জি ভিত্তিতে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে গমের দাম নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন গম ৪১৯ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ৪ কোটি ১৯ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৫৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি কেজি গমের দাম ৩৫.৭৬ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় অ্যাগ্রো বিজনেস প্ল্যানিং, টেকনোলজিস অ্যান্ড মার্কেটিং অ্যাডভান্স অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। যৌথভাবে জার্মানির এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফাইন্যান্স কনসালট্যান্ট এবং বাংলাদেশের সার্ভিস অ্যান্ড সলিউশন ইন্টান্যাশনাল লিমিটেডকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৪৮ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ২৩৮ টাকা।

সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশটির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিকটন ইউরিয়া সার ৪৯৮.৩৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিকটন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের দাম পড়বে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৭ কোটি ৬৭ লাখ ২১ হাজার ৪৬০ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ৫ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিকটন ৫০৬.৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিকটন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৯ কোটি ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬০ টাকা।

সভায় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’ (২০১৮ সালের সর্বশেষ সংশোধনীসহ) এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে ১৯তম এলএনজি আমদানির প্রস্তাবের আওতায় ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের দাম ৩৫.৮৯৩২ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২০৫ কোটি ৭২ লাখ ৮১ হাজার ৭২ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন- ২০১০’ (২০১৮ সালের সর্বশেষ সংশোধনীসহ) এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে ২১তম এলএনজি আমদানির প্রস্তাবের আওতায় ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের দাম ৩৬.৯৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১,২৪১ কোটি ২২ লাখ ৮২ হাজার ৪২৮ টাকা।

তিনি বলেন, নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের লট নম্বর পূর্ত-১(বি)-এর নির্মাণকাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। উন্মুক্ত দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকরা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান নূরানী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে প্রকল্পটির ঠিকাদান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার ৪১২ টাকা।

এসআর/এসএম