তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে দেশের পণ্য রফতানিতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। করোনা মহামারির মধ্যে সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে ৪১৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের বা ৩৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার পণ্য রফতানি হয়েছে। এ আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। গত বছর সেপ্টেম্বরে ৩০২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল।  

সোমবার ( ৪ অক্টোবর) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এক হাজার ১০২ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

ইপিবির পরিসংখ্যান আরও বলছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক ও বিশেষত নিটওয়্যার পণ্য রফতানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াপণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণেই সার্বিকভাবে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৯০৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার পণ্য রফতানি করেছে ৫১৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার, এ খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬ শতাংশ। আর উভেন পণ্য রফতানি হয়েছে ৩৮৯ কোটি ৫২ লাখ ডলারের, এই খাতে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

গতবছরের নেতিবাচক রফতানি প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এখন করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হয়েছে। পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামে পোশাকের ক্রেতা কিছুটা বাংলাদেশমুখী হতে থাকায় রফতানি ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।

তরুণ উদ্যোক্তা ‘ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড’-এর পরিচালক রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতবছর মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তৈরি পোশাক খাত। এখন ওই ক্ষত কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে, দোকানপাট খুলেছে, ফলে পোশাকের চাহিদা বাড়ায় নতুন অর্ডারও আসছে। এ কারণে রফতানি আয় বেড়েছে। এছাড়া সুতা, পণ্যের কাঁচামালের দাম ও উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণেও রফতানি আয় বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে এ আয় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় খুব বেশি নয় বলে দাবি করেন তৈরি পোশাকের এ উদ্যোক্তা।

তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে আমাদের পোশাক রফতানিতে ধস নামে। ওই বছর আমরা ৩৪ বিলিয়ন পোশাক পণ্য রফতানির লক্ষ্য নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের রফতানি হয়েছে মাত্র ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যা ছিল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। তাই গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এ বছর আয় বেশি দেখাবে। তবে ২০১৯ সালের সঙ্গে তুলনা করলে আয় খুব বেশি হবে না।

আগামীতে রফতানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে- এমন প্রত্যাশা জানিয়ে বিজিএমইএ-র এই নেতা জানান, এবার ৩৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন পোশাক রফতানির লক্ষ্য ঠিক করা হচ্ছে। আমাদের নতুন নতুন অর্ডার আসছে। আশা করছি এ লক্ষ পূরণ করতে পারব। হিসাব করলে ইতোমধ্যে আমরা ভিয়েতনামকে ছাড়িয়ে গেছি। বছর শেষে রফতানি আয় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হবে বলে জানান তিনি।    

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার হয়েছে। প্লাস্টিক পণ্য রফতানির আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তিন মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৭ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় চামড়াজাত খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ২৭ কোটি ১৩ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।

তবে এ সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে। সেপ্টেম্বর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২১ কো‌টি ২৩ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় ৩০ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

এসআই/এইচকে