ই-কমার্সের বিজ্ঞাপনে নতুন নিয়ম, রাখতে হবে সতর্কবাণী
অনলাইন ও টেলিভিশনে চটকদার বিজ্ঞাপন আর অতিরিক্ত মূল্যছাড়ের লোভনীয় অফার দেখে লাখ লাখ টাকার পণ্যের অর্ডার করছেন ক্রেতারা। কিন্তু মাসের পর মাস পার হলেও অনেক ক্ষেত্রে সেই পণ্য আর ঘরে আসছে না।
ই-কমার্সে যে প্রতারণা হতে পারে, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখার পর এমনটি ভুলেই যান ক্রেতারা। আর সেই সুযোগে পকেট কাটেন এক শ্রেণির অসাধু ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে যেন টাকা খোয়াতে না হয়, সে লক্ষ্যে ই-কমার্সের বিজ্ঞাপনে নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে। ই-কমার্সের সব ধরনের বিজ্ঞাপনে সতর্কবাণী বাধ্যতামূলক ভাবে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল (কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেল) সূত্র ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছে। নতুন নিয়মটি চালু করতে ইতোমধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায় নানা সমস্যা পর্যালোচনার জন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্রেতাদের সাবধান করতে ই-কমার্স বিজ্ঞাপন প্রচারে সতর্কবাণী যুক্ত করার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন বিজ্ঞাপনে নিয়মটি মেনে চলতে হবে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল (কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেল) সূত্র জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনলাইন কেনাকাটার বিজ্ঞাপন প্রচারে সতর্কবাণীর নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠিটি পাঠানো হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলীর সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায় সাম্প্রতিক সমস্যা বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকসহ অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, সব অনলাইন কেনাকাটার বিজ্ঞাপনের শেষে সতর্কবার্তা প্রচার করতে হবে।
‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি : অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা হতে সাবধান থাকুন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়’ আবশ্যিকভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সব মাধ্যমে অনলাইনে কেনাকাটার বিজ্ঞাপনের শেষে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে এ সতর্কবাণী যুক্ত করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এ নিয়ম ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখভাল করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাম্প্রতিক নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হয়তো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সুফল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম হয়তো পাবে। সিদ্ধান্তটি যেন ই-কমার্স ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, তা বিবেচনায় রাখতে হবে।
নিয়মটি চালুর বিপক্ষে মত দিয়েছেন একাধিক ই-কমার্স উদ্যোক্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্যোক্তারা বলেন, ই-কমার্স তো প্রতারণা বা খারাপ জায়গা নয় যে, এখানে বিজ্ঞাপনে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। হয়তো সাময়িক সময়ের জন্যে ই-কমার্স খারাপ সময় পার করছে। দেশে হাজার হাজার উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা এ প্ল্যাটফর্মে ভালো কাজ করছেন।
উদীয়মান ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের দাবি, বিজ্ঞাপনে যদি নেতিবাচক কথা তুলে ধরা হয়, তাহলে পুরো ই-কমার্স ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যারা অনলাইনে কেনাকাটা করেন, তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত। তারা তো এমনিতেই সচেতন। সচেতন হয়ে অতিরিক্ত লোভ করলে তার দায় তো নিজেকেই নিতে হবে।
এক শ্রেণির ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে হাজার হাজার ক্রেতা পণ্য অর্ডার করে টাকা বা পণ্য কোনোটিই ফেরত পাচ্ছেন না। ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে ২০ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। অধিকাংশ ক্রেতার অভিযোগ, অনলাইনে বিজ্ঞাপনে মূল্যছাড়, নানা ধরনের অফার দেখিয়ে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনতে উদ্বুদ্ধ করছেন। অগ্রিম অর্থ দিয়ে অর্ডার করার পর আর সেই পণ্য সরবরাহ করছেন না তারা।
একে/আরএইচ