পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থেকে গ্রিন সুকুকে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালা’ সংশোধন করে সার্কুলার জারি করেছে। এছাড়া একই বিভাগ থেকে অপর এক নির্দেশনায় বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের সুবিধা গ্রহণের সময় ৩১ ডিসেম্বর ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আগে এ সময় ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল।
 
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের সম্পূর্ণ অংশ (লভ্যতা অনুসারে) ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ, বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ, জল বিদ্যুৎ, বায়োমাস ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ইস্যু করা তালিকাভুক্ত বা সাবস্ক্রিপশন ক্লোজিংয়ের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত হবে, এমন ১০০ শতাংশ অ্যাসেট ব্যাকড গ্রিন সুকুকে বিনিয়োগ করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে।

ইসতিসনা সুকুক, সালাম সুকুক, ইজারাহ সুকুক এছাড়া একাধিক সুকুকের সমন্বয়ে গঠিত কোন হাইব্রিড সুকুকে
বিনিয়োগ করা যাবে।

সুকুকের তহবিল ব্যবহার

পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ মার্জিনে ঋণপত্র খুলতে হবে। পণ্য ১২০ দিনের মধ্যে জাহাজীকরণ বা সরবরাহ করার শর্ত থাকতে হবে। সব ধরনের স্থানীয় ব্যয়, যদি থাকে তাহলে ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প উন্নয়নে সর্বোচ্চ ৮ মাস সময় বরাদ্দ থাকতে পারে। সুকুক সাবস্ক্রিপশন ক্লোজিংয়ের তারিখ থেকে সময়সীমা কার্যকর হবে। সুকুকের তহবিল ‘স্পেশাল পার্পাস ভেহিকেল' বা এসপিভি নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ করতে হবে। ওই ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুকের জন্য নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট ব্যয় ব্যতীত অন্য কোন খাতে খরচ বা কর্জ প্রদান করা যাবে না।

প্রাইভেট প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে কোনো কারণে বিএসইসির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুকুকের সাবস্ক্রিপশন সম্পূর্ণ না হলে বা সুকুক ইস্যুর বিষয়টি বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট এসপিভির মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যে বিনিয়োগকারী ব্যাংক হিসাবে সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে হবে। এ বিষয়ে সুকুকের ট্রাস্টি এসপিভি এবং বিনিয়োগকারী ব্যাংকের  মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে। সেকেন্ডারি মার্কেট বা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বা উভয় প্রকারে কোনো সুকুকের মোট ইস্যুর ১০ শতাংশের বেশি পরিমাণ কোনো ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারবে না। রূপান্তরযোগ্য সুকুকের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পর ইক্যুয়িটি ধারণ যাতে ১০ শতাংশের বেশি না হয়, তা বিনিয়োগকারী ব্যাংককেই নিশ্চিত করতে হবে।

অতালিকাভুক্ত সুকুক

এ বিনিয়োগের পূর্বে সাবস্ক্রিপশন ক্লোজিংয়ের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে তালিকাভুক্তির বিষয়ে ট্রাস্টি এসপিভি, ইস্যুয়ার এবং বিনিয়োগকারী ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে।

জানা গেছে, দেশের প্রথম শরিয়াহভিত্তিক করপোরেট সুকুক বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল-ইসতিসনা নামে ৩ হাজার কোটি টাকার শরিয়াহভিত্তিক বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বেক্সিমকো লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেডের নির্মাণকাজে ব্যয় করা হবে। এছাড়া বেক্সিমকোর বস্ত্র খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে এ অর্থ ব্যবহার করা হবে। তাদের সুবিধা দিতেই এ বন্ডে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

এর আগে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিল গঠনে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারছে।

এসআই/এসকেডি