সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস নিশ্চিত করতে সয়াবিন মিল রফতানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের পোল্ট্রির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তারা।

বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি হোটেলে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ আয়োজিত মিট দ্যা প্রেসে এ দাবি জানান তারা। 
 
মিট দ্য প্রেসে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে হাঁস-মুরগি, মৎস্য ও গবাদিপশুর খাদ্য তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ ‘সয়াবিন মিল’ রফতানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে খামারি ও উদ্যোক্তাদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিখাদ্য তৈরিতে প্রধান যে কাঁচামালগুলো ব্যবহার হয় তার মধ্যে ভুট্টা, সয়াবিন মিল, গম, আটা, ময়দা, ভাঙা চাউল, চাউলের কুড়া, ফিশ মিল, সরিষার খৈল, তৈল, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি অন্যতম। এর মধ্যে দুটি উপকরণ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় তা হলো ভুট্টা ও সয়াবিন মিল।

বাংলাদেশে সয়াবিন মিলের মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আসে। অবশিষ্ট ২০ থেকে ২৫ ভাগ আসে আমদানি থেকে।  

সয়াবিন মিল রফতানির সিদ্ধান্তে খামারিরা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ডিম, মাছ, মুরগি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচই হয় ফিড কেনা বাবদ। তাই ফিডের দাম বাড়লে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। অন্যদিকে খরচের বিপরীতে পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হবে খামারিদের। 

বক্তারা অভিযোগ করেন, দেশের মানুষের স্বার্থে শূন্য শুল্ক সুবিধায় আনা সেই সয়াবিন সিড থেকে উৎপাদিত সয়াবিন মিলই এখন তিন থেকে চারটি সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার স্বার্থে রফতানি করছে। অতীতে কখনো ভারতে সয়াবিন সিড কিংবা সয়াবিন মিল রফতানি হয়নি।

মিট দ্য প্রেসে জানানো হয়, বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন মিল আমদানি করতে হলে এলসি করা থেকে শুরু করে বন্দরে মাল এসে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৫০ দিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সময় লাগে ৭০ দিন। ভারত থেকে সড়কে সাত থেকে ১০ দিন, কনটেইনারে ১৫ থেকে ২০ দিন।

‘সয়াবিন মিল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার’- গণমাধ্যমে এমন খবরে স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বাড়িয়েছে। সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সয়াবিন মিল রফতানি বন্ধ ঘোষণা দ্রুত দেওয়া দরকার, নইলে দেশের পোলট্রি, মৎস্যসহ প্রাণিসম্পদ খাতে খাদ্য দাম বেড়ে যাবে। খামারিরা বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন।

মিট দ্যা প্রেসে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান, সদস্য, মসিউর রহমান, আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদসহ অনেকে।

একে/আরএইচ