খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা আরও এক বছর চায় বিজিএমইএ
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বা এককালীন পরিশোধ (ওয়ান টাইম এক্সিট) সুবিধা আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
বিজ্ঞাপন
চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিশেষ সুবিধায় সুদ মওকুফ ও মওকুফোত্তর অবশিষ্ট ঋণ এককালীন পরিশোধের জন্য (এক বছর মেয়াদে) অনেক গ্রাহকের আবেদন ব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদন হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেননি।
বিজিএমইএ জানায়, গত দুই বছর বিশ্বব্যাপী করোনায় বারবার লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে দেশীয় শিল্প বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক ও মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের তারল্য সংকট দেখা দেওয়ার ফলে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তা হতাশ হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে যেসব গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠান বিশেষ সুবিধার আবেদন করে ব্যাংকের বোর্ডের অনুমোদন পেয়েছিল, কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এক বছরে ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি, তাদের বিশেষ বিবেচনায় আরও এক বছর সময় বাড়ানোর দাবি করেছে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের এ সংগঠন। সংগঠনটির দাবি, এক বছর সময় দেওয়া হলে দেশের শিল্প খাত ও ব্যাংক উভয়ই উপকৃত হবে। পাশাপাশি অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাবে এবং খেলাপি ঋণ কমে যাবে।
জানা গেছে, খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের ইচ্ছায় ২০১৯ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে নয় শতাংশ সরল সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ টানা ১০ বছরেও ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নিন্দা ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেয়। এরপর ওই সার্কুলারের স্থগিতাদেশ চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়। পরে অবশ্য আদালত এ সুবিধার পক্ষে আদেশ দেন।
এ সুবিধার আওতায় স্বাধীনতার পর থেকে যারা ঋণ খেলাপি, তাদের এককালীন এক্সিট সুবিধা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তাদের খেলাপি ঋণের হিসাব হয় ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের এককালীন হিসাবায়ন ভিত্তিতে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যত খেলাপি ঋণ ছিল তার হিসাব করা হয়। কোনো ঋণ খেলাপি যদি মনে করেন, এককালীন ঋণ পরিশোধ করে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয় ওই বিশেষ সুবিধায়।
নির্দেশনায় বলা হয়, দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ঋণ খেলাপিরা ঋণ পরিশোধের জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। আগের সব সুদ বাবদ পাওনা মওকুফ করা হবে। এককালীন পরিশোধের জন্য সুদহার আরও কম- ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের সমান। তবে এক বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সুবিধা বাতিল হবে।
এককালীন এক্সিট সুবিধা ও পুনঃতফসিল সুবিধা কার্যকরের ৯০ দিনের ব্যাংক ও গ্রাহকের মামলা স্থগিত করতে হবে। পরবর্তীতে গ্রাহক কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে সুবিধা বাতিল করে মামলা পুনরায় চালু হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এককালীন পরিশোধ বা এক্সিট সুবিধা নিয়েছেন চার হাজার ২২৫ জন গ্রাহক। এ গ্রাহকদের এক হাজার ৩২২ কোটি টাকার এক্সিট সুবিধা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। অথচ সুদ মওকুফ করা হয়েছে এক হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক্সিটের চেয়ে ২৯৫ কোটি টাকার বেশি সুদ মওকুফ করা হয়েছে।
বিশেষ ওই নীতিমালার আওতায় মোট ১৯ হাজার ১১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত হয়। এজন্য ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফ করেছে আট হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে নগদ আদায় হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকার পুনঃতফসিলের জন্য সুদ মওকুফ করা হয়েছে সাত হাজার ২৯০ কোটি টাকা, যেখানে ডাউনপেমেন্ট হিসেবে নগদ আদায় হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, এক হাজার ৩২২ কোটি টাকার এক্সিট সুবিধার জন্য সুদ মওকুফ করা হয়েছে এক হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে নগদে আদায় হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় সরকারি ব্যাংক বেশি হারে সুদ মওকুফ করেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়।
এসআই/আরএইচ