খেলাপি ঋণ ৬৫৬৯ কোটি টাকা
বেওয়ারিশ ঋণে খাদের কিনারে ৫ প্রতিষ্ঠান
বেড়ায় ক্ষেত খায়, কিংবা সর্ষের মধ্যেই ভূত, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ— এমন প্রবাদের প্রতিফলন ঘটেছে বেশকিছু ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। মূল কথা, ক্ষমতা হাতে পেলেই চলে হরিলুট।
অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকরা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এজন্য নামে-বেনামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে বেওয়ারিশ ঋণ। যা পরবর্তীতে আর ফেরত আসছে না। শেষমেশ প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। এমন পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। যাদের মোট বিতরণ করা ঋণের বেশির ভাগই ‘মন্দ ঋণ’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারও কারও ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা এ খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশ
খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা এ খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশ।
দেশে এখন ব্যাংকবহির্ভূত ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মার্চ শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৬৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
বিআইএফসি
খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেউলিয়ার পথে থাকা বিআইএফসির বিতরণ করা ৮১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ৭৭২ কোটি তিন লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৯৫ শতাংশ খেলাপি। এর মধ্যে ৭৭০ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য ঋণ। এগুলোর বেশির ভাগই নামে-বেনামে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন সানম্যান গ্রুপ। সম্প্রতি অনিয়মের অভিযোগে আদালতের নির্দেশনায় গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটি মেজর মান্নান ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বিআইএফসির বিতরণ করা ৮১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ৭৭২ কোটি তিন লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৯৫ শতাংশ খেলাপি। এর মধ্যে ৭৭০ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য ঋণ। এগুলোর বেশির ভাগই নামে-বেনামে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন সানম্যান গ্রুপ
অনিয়মের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইএফসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম আশফাকুর রহমান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘৯৫ শতাংশ খেলাপি ঋণই দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আদালত বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। তারা ঋণ আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সেই আলোকে আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আশফাকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মেজর মান্নানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার মতো ঋণ রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই খেলাপি। এসব ঋণ আদায়ে তার নামে ২৭টি মামলা হয়েছে। যার অধিকাংশের ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এছাড়া প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ফাস ফাইন্যান্স
এফ এ এস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (ফাস ফাইন্যান্স) চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে এক হাজার ৬৯১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৮৮ শতাংশই খেলাপি। আদায় অযোগ্য এক হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৩০৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
ফাস ফাইন্যান্স চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে এক হাজার ৬৯১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৮৮ শতাংশই খেলাপি। আদায় অযোগ্য এক হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি
অভিযোগ আছে, পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ নিয়ে হরিলুট করা হয়েছে। এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ারের একক স্বাক্ষরে ৭০০ কোটি টাকার ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। যার বিপরীতে ছিল না কোনো মর্টগেজ (ঋণের জন্য স্থাবর সম্পত্তি গচ্ছিত রাখা)। লোক দেখানো বোর্ড মিটিংয়ে তা পাস করিয়ে অর্থছাড়ও করা হয়। এর পেছনের কারিগর ছিলেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। ফাস ফাইন্যান্সের এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের রহস্য উদঘাটনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন রাসেল শাহরিয়ার।
ফাস ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি ও সিইও মো. রাসেল শাহরিয়ারের একক স্বাক্ষরে ৭০০ কোটি টাকার ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এর বিপরীতে ছিল না কোনো মর্টগেজ। লোক দেখানো বোর্ড মিটিংয়ে তা পাস করিয়ে অর্থছাড়ও করা হয়। এর পেছনের কারিগর ছিলেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং
একসময় ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি ছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের। দেশের ভালো কয়েকটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ দখল করে নেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পি কে হালদার। প্রভাব খাটিয়ে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। প্রতিষ্ঠানটি এখন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। অন্যদিকে কষ্টার্জিত জমানো অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আমানতকারীরা।
একসময় ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি ছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের। দেশের ভালো কয়েকটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ দখল করে নেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পি কে হালদার। প্রভাব খাটিয়ে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আইএলএফএসএল চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট চার হাজার ২২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে তিন হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ৭৫ শতাংশই খেলাপি। যার দুই হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে খেলাপির শীর্ষে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
জানা যায়, আমানতকারীরা প্রাপ্ত অর্থ না পেয়ে আদালতে যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রয়াত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে চেয়ারম্যান হিসেবে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এক মাসের মাথায় তিনি ওই পদ ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সক্রিয় না হলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংকে বাঁচানো সম্ভব নয়। পরে আদালতের নির্দেশে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানকে (এন আই খান) প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে কাজ করছেন তিনি।
ফারইস্ট ফাইন্যান্স
পরিচালকদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সংকটের মুখে পড়েছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে প্রতিষ্ঠানটি ৯৪০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা খেলাপি। মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ১৭১ কোটি টাকা। এছাড়া সাড়ে ১০ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
চলতি বছরের মার্চ শেষে ফারইস্ট ফাইন্যান্স ৯৪০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা খেলাপি। মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ১৭১ কোটি টাকা। এছাড়া সাড়ে ১০ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির
জানা যায়, ফারইস্ট ফাইন্যান্স প্রায় ৫০ কোটি টাকার ঋণ দেয় আলোচিত পি কে হালদারের তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে পিপলস লিজিংয়ে ৩৮ কোটি এবং বাকি টাকা এফ এ এস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিকে দেওয়া হয়। এর সবই এখন আদায় অযোগ্য।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স ২০১৭ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের নানা অনিয়মের কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
প্রিমিয়ার লিজিং
নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেক খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত ঋণের বেশির ভাগই বারবার পুনঃতফসিলের সুবিধা নিচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ২৯৯ কোটি ৫১ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৪৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ অর্থাৎ ৬৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা খেলাপি। যার ৫২৬ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য। পাশাপাশি ১১৭ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। সবমিলিয়ে দুরবস্থায় রয়েছে প্রিমিয়ার লিজিং।
প্রিমিয়ার লিজিং মার্চ শেষে এক হাজার ২৯৯ কোটি ৫১ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৪৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ অর্থাৎ ৬৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা খেলাপি। যার ৫২৬ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য। পাশাপাশি ১১৭ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে বিতরণ করা ঋণ আদায় হচ্ছে না, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সমস্যাগ্রস্ত বেসিক ব্যাংকে ১৯৪ কোটি টাকা আমানত রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব অর্থ ফেরত পাচ্ছে না। ফলে আমানতকারীদের জমানো অর্থ ফেরত দিতে পারছে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরভিত্তিক অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর আলোকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যাংকে রাখা ১৯৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার আমানত দীর্ঘদিন ফেরত পাচ্ছে না প্রিমিয়ার লিজিং। এর বিপরীতে সুদও পাচ্ছে না। প্রিমিয়ার লিজিং যে পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে ফেরত পাচ্ছে না, এর চারটি দেশ থেকে পলাতক আলোচিত পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ৫৪ কোটি, পিপলস লিজিংয়ে ৪৭ কোটি, এফ এ এস ফাইন্যান্সে ৪৩ কোটি এবং বিআইএফসিতে রয়েছে ১১ কোটি টাকা। রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে আছে ১৬ কোটি আট লাখ টাকা। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এসব অর্থ রাখা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দুর্বলতার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখানে যথাযথ নিয়মাচার মানা হয়নি। পরিশোধের সক্ষমতা না থাকলেও খেলাপি ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করা হয়েছে। প্রকৃত দামের চেয়ে জামানতের মূল্য অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। তহবিল ব্যবস্থাপনা-ব্যয়ের চেয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে আমানত কম সুদে রাখা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা, করপোরেট সুশাসনের অভাব এবং দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থাপনার কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতার সঙ্গে পর্ষদ সদস্যদের একটা যোগসাজশ রয়েছে। তা না হলে এত খেলাপি হবে কেন? এ ঋণ আদায়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কঠোর মনিটরিং থাকা দরকার।’
‘কেন ঋণ আদায় হচ্ছে না, কীভাবে ঋণ দেওয়া হয়েছে তার অনুসন্ধানের দায়িত্ব তো নিয়ন্ত্রণ সংস্থার। এখানে যদি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার কেউ অনিয়ম করেন তাহলে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। এটির দায়িত্ব তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।’
এসআই/এমএআর/এমএইচএস