বকেয়া বিল ও কর সুবিধা চেয়েছে হোটেল ওয়েস্টিন
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের আবাসন বকেয়া ৬৪ লাখ টাকা এবং করোনাভাইরাস মহামারিতে ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব থেকে উত্তরণে কর সুবিধা দাবি করেছে দ্য ওয়েস্টিন ঢাকার মূল কোম্পানি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড (ইউএইচআরএল)।
ইউএইচআরএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূর আলী সই করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া পৃথক চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ২১ ও ২২ জুন তারিখে চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে বলে এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
চিঠিতে দেড় বছর ধরে চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করে কোম্পানিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের পাওনা তাদের ৬৪ লাখ টাকার অবৈতনিক বিল পরিশোধ করার অনুরোধ করেছে।
‘২০২০ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসকদের থাকা ও খাবার বাবদ হোটেলের বকেয়া বিল পরিশোধের আবেদন’ শীর্ষক এক চিঠিতে বলা হয়েছে, আমাদের মালিকানাধীন ‘ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড (হানসা)’ হোটেল ২০২০ সালের ৩ জুন তারিখে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রথম কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসকদের আবাসন, খাদ্য ও যাতায়াত সুবিধা প্রদান করে। হোটেলের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা জীবনবাজি রেখে মহামারি করোনা মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি থেকে সর্বোচ্চ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সরকার নির্দেশিত প্রোটকল বজায় রেখে চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩ জুন থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেবা প্রদান করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় চুক্তির শর্তানুযায়ী জুন ও জুলাই মাসের হোটেল বিল পরিশোধ করা হলেও আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া যথাক্রমে ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ও ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মোট ৬৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
এ বিষয়ে যথানিয়মে ইনভয়েস সাবমিট করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মধ্যে ওই দুই মাস হোটেলে ডাক্তারদের আবাসনের বিষয়ে উপযুক্ত প্রমাণের চিঠি চালাচালির মধ্যেই ২০২০-২০২১ অর্থবছরের শেষ মাস পর্যন্ত আমাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। ফলে আমাদের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী অর্থবছরে পরিশোধের আরেক জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বকেয়া খাতে অর্জিত সরকারি সব পাওনা যথা- ভ্যাট, বিদ্যুৎ গ্যাস, ওয়াসা, ইনকাম ট্যাক্সসহ স্টাফদের বেতন-ভাতা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে যথাসময়ে পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে কোভিডকালীন হসপিটালিটি খাতের ব্যবসায়িক মন্দায় আর্থিক সংকটের জন্য হোটেল পরিচালনা অসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্তমান ২০২০-২০২১ আর্থিক বছরের পাওনা পরিশোধের অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। যার মধ্যে রয়েছে- কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সদের হোটেল আবাসন বকেয়া ২০২০ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের পাওনা পরিশোধ করা।
কোয়ারেন্টাইন এক্সপেন্স বাজেট থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের পাওনা পরিশোধে উদ্ভূত জটিলতা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখাকে অগ্রিম অনুমোদন করার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে এনবিআরকে দেওয়া অপর এক চিঠিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাবের সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করে দ্য ওয়েস্টিন ঢাকার মূল কোম্পানি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডের আয় ক্রমাগত কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের তুলনায় আয় কমেছে ৬১ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় ২১৮ কোটি ৭ লাখ টাকা হলেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। করোনা বিস্তারে বর্তমানে আয়ের সূচক আরও নিন্মগামী।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, আমরা ভালো দিনগুলোতে সরকারকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি কর দিয়েছি। এখন খারাপ দিন যাচ্ছে, তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারকে সাহায্য করার অনুরোধ করছি। সাহায্য হিসেবে হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের দেওয়া সেবা ও মুনাফার ওপর প্রযোজ্য কর-ভ্যাট কমানো এবং আগামী পাঁচ বছরের জন্য করপোরেট আয়কর থেকে অব্যাহতির সুবিধা দাবি করা হয়েছে চিঠিতে।
২০০৬ সালে রাজধানীর গুলশানে ২৯তলা ভবনে ওয়েস্টিন ঢাকার যাত্রা শুরু হয়। ওয়েস্টিন বাংলাদেশের সর্বাধিক উঁচু ভবনের হোটেল, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উঁচু হোটেলগুলোর একটিও এটি। হোটেলটিতে বিভিন্ন ধরনের ২৩৫টি কক্ষ রয়েছে। তার মধ্যে ১৯৭টি স্ট্যান্ডার্ড কক্ষ, ৩৭টি সুইট ও একটি প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট। এছাড়া একাধিক রেস্তোরাঁ ও অনুষ্ঠানের জন্য জায়গাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
আরএম/এসএসএইচ