খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা
#জুন শেষে খেলাপি ঋণ ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা
#ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা
করোনা মহামারিতে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়েছে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে চলতি বছরে ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধার মধ্যেও ব্যাংকিং খাতে বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা বেড়েছে। এতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট প্রদান করা ঋণের ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা যা ছিল মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শর্ত শিথিলের কারণে গত বছরজুড়ে ঋণ শোধ না করলেও কেউ খেলাপি হননি। এ বছর নতুন করে আগের মতো ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়নি। যেসব মেয়াদি ঋণ চলতি বছরের মার্চের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল, ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে তা জুন পর্যন্ত পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
জুন শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করে ২ লাখ ১২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ। মার্চে খেলাপি ছিল ৪৩ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। সে সময় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।
আর চলমান ঋণের ওপর ২০২০ সালে আরোপিত অনাদায়ী সুদ একবারে পরিশোধ না করে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে- এমন সুযোগও দেওয়া হয়। এ ছাড়া তলবি ঋণ চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আটটি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। তিন মাস আগে গত মার্চে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
জুন শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করে ২ লাখ ১২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ। মার্চে খেলাপি ছিল ৪৩ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। সে সময় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৪ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। মার্চে এসব ব্যাংকের ঋণ ছিল ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। মার্চে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৪৫ হাজার ৯০ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে ৪৯ হাজার ১৯১ কোটি টাকা হয়েছে, যা এ খাতের ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
জুন শেষে বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা, যা মোট প্রদান করা ঋণের ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ হয় ৬৩ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। মার্চে বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ছিল ২ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, যা মোট প্রদান করা ঋণের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ছিল ৫৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।
জুনে বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এ অংক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তারা বিতরণ করেছে মোট ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনটি কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। প্রথমত, করোনার কারণে এখন ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এখন কিছু সুবিধা কমিয়ে এনেছে। কিন্তু ঋণ গ্রহীতারা মনে করছেন ঋণ শোধ না করলে আরও সুবিধা পাওয়া যাবে। যাদের ব্যবসা ভালো তারাও ঋণ শোধ করছেন না, কারণ যদি পরে ঋণ পেতে সমস্যা হয়। আর তৃতীয়ত, এখন ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ে তেমন আগ্রহ নেই। এখন আদায় না করেই নানা ছাড় নিয়ে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে ঋণ আদায় না করলেও তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আগের মত ঋণ আদায়ে চাপ দেয় না। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
তিনি বলেন, এখন খেলাপি কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটু তৎপর হতে হবে। ব্যাংকিং খাতের জন্য ক্ষতি হয় এমন সুবিধা বন্ধ করতে হবে। ঋণ আদায় বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।
এসআই/আরএইচ/জেএস