ব্যাংকের বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন দিতে নারাজ বিএমবিএ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন না নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে নেওয়ার প্রস্তাব জানিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
সোমবার (১৬ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়ে এ প্রস্তাব জানিয়েছে বিএমবিএ। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমরা লেনদেনের তথ্য দিতে প্রস্তুত। কিন্তু প্রতিদিনের ডাটা প্রতিদিন দেওয়া সম্ভব না। এটা এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা যায় না। তাই আমরা মাসিক ভিত্তিতে তথ্য নেওয়ার প্রস্তাব করেছি।
তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে আমাদের পুঁজিবাজার গ্রোয়িং মুডে আছে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন দেওয়ার নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পুঁজিবাজারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবশ্যই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে আলোচনা করা উচিত।
চিঠিতে বলা হয়, প্রতিদিনের লেনদেনের ডাটা সঠিকভাবে বিকেল পাঁচটার মধ্যে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। প্রতিদিন লেনদেন শেষ হয় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে। এর এক ঘণ্টা পর স্টক এক্সচেঞ্জগুলো লেনদেনের ডাটা তৈরি করে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে পাঠায়। এরপর ব্রোকার হাউসগুলো তথ্য যাচাই-বাছাই করে গ্রাহকদের কাছে পাঠায়। এরপর প্রকৃত তথ্যের ডাটা তৈরি করতে ৫টা থেকে ৬টা বাজে। তাই আমরা মনে করি, দৈনিক ভিত্তিতে ডাটা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। এমতাবস্থায় দৈনিকের পরিবর্তে মাসিক ভিত্তিতে লেনদেনের তথ্য নিলে কোনো প্রকার জটিলতা কিংবা আতঙ্ক হবে না।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়েছে। তাতে প্রতিদিন ব্যাংকগুলো কোথায় কী পরিমাণ বিনিয়োগ করছে তা বিকেল ৫টার মধ্যে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার স্তূপ বাড়ছে। বিনিয়োগের জায়গা পাচ্ছে না। ফলে নানা অনিয়মের মাধ্যমে শেয়ারবাজারসহ অনুৎপাদনশীল খাতে টাকা চলে যাচ্ছে। বিষয়টি তদারকি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারে গত বছর প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। প্রণোদনা প্যাকেজের বেশিরভাগ ছিল স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে বিতরণ করছে এ প্রণোদনার ঋণ। যার অর্ধেক সুদ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
কর্মকর্তারা আরও জানান, কিন্তু কিছু গ্রাহক স্বল্প সুদের এ ঋণের যথাযথ ব্যবহার না করে শেয়ারবাজারসহ নানা অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করছে। নিজস্ব তদারকি ব্যবস্থায় এমন অনিয়মের প্রমাণ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সবগুলো ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়ে এ সতর্কতা জারি করা হয়। চিঠিতে প্রণোদনা ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে যাতে ব্যবহার না হয় সে বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে।
এদিকে, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও প্রণোদনার ঋণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঋণের সঠিক ব্যবহার যাচাইয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সর্বশেষ দৈনিক ভিত্তিতে মুদ্রাবাজারে লেনদেন ও বিনিয়োগের তথ্য জানাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মুদ্রাবাজারে দৈনিক লেনদেনের তথ্য সংযুক্ত ছক অনুযায়ী পাঠাতে হবে। দৈনিক ভিত্তিতে বিকেল ৫টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগে এ তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের নিজস্ব বিনিয়োগের তথ্য পাঠাতে হবে। যেখানে নতুন বিনিয়োগ, মোট বিক্রয়মূল্য (সেল ভ্যালু) ও নেট এক্সপোজার পাঠাতে হবে। প্রতিদিনের মার্জিন ঋণের পরিমাণ, স্থিতি ও সমন্বয় জানাতে হবে। এছাড়া নিজস্ব ও সাবসিডিয়ারিতে প্রতিদিনের ঋণসীমা, তহবিল ছাড়, তহবিল সমন্বয় এবং নেট এক্সপোজারের তথ্য দিতে হবে।
আশানুরূপ ঋণ চাহিদা না থাকায় গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর সিআরআর সংরক্ষণের পর অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই সময়ে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ যেন অনুৎপাদনশীল খাতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি করতে না পারে সে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত তারল্য বিল বন্ডের মাধ্যমে তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার (৯ আগস্ট) ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ নিলামের মাধ্যমে বাজারের অতিরিক্ত তারল্য থেকে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি এ বিলের বার্ষিক সুদ হবে এক শতাংশের কম।
এমআই/এইচকে