অযৌক্তিকভাবে সুতার দাম বাড়ানো হবে না
দেশীয় বাজারে অযৌক্তিকভাবে সুতার দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সঙ্গে পোশাক খাতের ৩টি সংগঠন- বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড অ্যাক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) নেতাদের মধ্যে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক, টেরি টাওয়েল রফতানিকারক ও টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার (১১ আগস্ট) বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
সুতার বাড়তি দাম নিয়ে পোশাক ও বস্ত্র খাতের মালিকেরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে সমস্যা নিরসনে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় এ বিষয়ে বৈঠক হয়।
বৈঠকে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ’র সভাপতি এ. কে. এম. সেলিম ওসমান ও প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিটিএলএমইএ’র চেয়ারম্যান এম শাহাদাৎ হোসেন এবং বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদ, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ এবং বিটিএমএ’র সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী ও এ. মতিন চৌধুরীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন পোশাকশিল্পের নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিটিএমইএ’র সদস্যভুক্ত মিলগুলো এলসি ওপেনসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য ন্যূনতম ১৫ দিনের মেয়াদ উল্লেখ করে পি-আই ইস্যু করবে। যা সাম্প্রতিক সময়ে খুব স্বল্প সময়ের মেয়াদ দিয়ে ইস্যু করা হচ্ছিল। পি-আই হচ্ছে জাহাজীকরণের আগে সরবরাহকারী ক্রেতার কাছে পাঠানো আনুমানিক চালানপত্র।
বৈঠকে উপস্থিত নেতারা একমত হন যে ইয়ার্নের মূল্য কমানোর জন্য আগামী সোমবার তারা আবারও বৈঠকে বসবেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শিল্পকে রক্ষা করা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান এ ক্রান্তিকালে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ৩০এস ইয়ার্নের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণের দাবি জানান। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে পি-আই সংক্রান্ত ইস্যুসহ অন্যান্য ইস্যুগুলো সমাধান করার লক্ষ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিটিএলএমইএ ও বিটিএমএ প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি আরবিট্রেশন সেল গঠন করা হবে। এই সেল পাক্ষিকভাবে ১৪ দিন পরপর বৈঠকে বসবে।
এর আগে পোশাক রফতানিকারকরা স্থানীয় বাজারে ইয়ার্নের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিতে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল। ইয়ার্নের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি পোশাকশিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যে শিল্পটি ইতোমধ্যেই পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও পণ্যের দরপতনের কারণে কঠিন সময় অতিক্রম করছে।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে গণটিকাদান কর্মসূচির কারণে ওই দেশগুলোতে দোকানপাট খুলছে, সেই সঙ্গে দেশগুলোতে খুচরা বিক্রি দ্রুত হারে বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশে প্রচুর অর্ডার আসছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ইয়ানের্র অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে রফতানিকারকরা সব অর্ডার নিতে পারছেন না। আর বাংলাদেশের রফতানিকারকরা যদি অর্ডারগুলো নিতে না পারেন, তাহলে সেগুলো নিশ্চিতভাবেই অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোতে চলে যাবে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। কারণ- মোট রফতানি করা পোশাক পণ্যের ৭৫ শতাংশই তুলা দ্বারা প্রস্তুতকৃত। বাংলাদেশ বিশ্বে তুলা আমদানিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। আর কোনো কারণে যদি এই শিল্পের কাঁচামাল অর্থাৎ তুলা/ইয়ার্নের সরবরাহ বা মূল্য প্রভাবিত হয়, তবে সেটা আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে।
কোভিড-১৯ এর কারণে ইতোমধ্যে আমাদের অনেক কারখানা নজিরবিহীন ক্ষতির মুখে পড়েছে। অর্ডার বাতিল, মূল্য না পাওয়া, ডিসকাউন্ট, ফোর্স লোন ইত্যাদি কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারছে না। আবার ব্যবসা থেকে প্রস্থানও করতে পারছে না। কিন্তু দায়-দেনা প্রতিদিনই বাড়ছে। এ অবস্থায় থেকেই কারখানাগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করছে ক্ষতি সামলে নিয়ে টিকে থাকতে।
করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনায় খরচ বাড়ছে, যেখানে পণ্যের দরপতন হয়েছে ৩.৭৬ শতাংশ। পরিবহন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। মজুরি, বিদ্যুৎ, ব্যাংক চার্জ সব মিলিয়ে গত ৮ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৩০.১১ শতাংশ। এমতাবস্থায় পোশাকশিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখা ও শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য ইয়ার্নের মূল্য না বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি পোশাকশিল্পের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ।
এমআই/এসএম