দুর্ভোগ পেরিয়ে কারখানায় শ্রমিকরা
বাড়তি ভাড়া, পথে পথে দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পেরিয়ে শিল্প-কারখানায় উপস্থিত হয়েছেন শ্রমিকরা। টানা ১২ দিন পর রোববার (১ আগস্ট) রাজধানী ঢাকার কারখানাগুলো চালু হয়েছে। একইদিনে রাজধানীর আশপাশে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও আশুলিয়াসহ শিল্প এলাকার রফতানিমুখী কারখানাগুলো চালু হয়েছে।
ভোর থেকেই ঢাকা প্রবেশ করতে শুরু করে যাত্রীভর্তি বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার। আর সকাল সাড়ে ৭টার পর থেকে দলে দলে শ্রমিকরা কারখানায় যেতে শুরু করেন। রাজধানীর তেজগাঁয়ের কারখানাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের আগেই পানি ও সাবান জাতীয় পাউডার দিয়ে পরিষ্কার হয়ে কারখানায় ঢুকছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে তারা প্রবেশ করছেন।
বিজ্ঞাপন
নেত্রকোনা থেকে ভোর রাতে এসে ঢাকায় পৌঁছান দুই বোন রেহানা ও খাদিজা। বড় বোন রেহানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শনিবার (৩১ জুলাই) বিকেল বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। ময়মনসিংহ আসছি যখন, তখন রাত বাজে সাড়ে ১০টা। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি বাস ছাড়ে মহাখালীর উদ্দেশ্যে, বাসটি মহাখালী আসে রাত ২টার দিকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই বোনসহ আমাদের গ্রামের ১২ জন এক লগে আইলাম, এর লাইগা আইতাম পারছি। না অইলে আইতাম পারতাম না।’
খাদিজা বলেন, ‘হেঁটে, রিকশা, অটোরিকশা, ট্রাকে আর বাসে ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা ঢাকায় ফিরছি। কারখানা থেকে ফোন দিছে আজকে খোলা। অফিস আসতে হবেই। নইলে চাকরি থাকবে না। তাই এক হাজার টেকার ভাড়া তিন হাজার টেকা দিয়া আইছি। কষ্ট হইছে, টেকাও বেশি গেছে। তারপরও আইতাম পারছি।’
যশোর থেকে আসা তেজগাঁওয়ের নাসা গামেন্টেকর্মী বিপ্লব বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের পর ২৭ তারিখ পর্যন্ত আমার ছুটি ছিল। সরকার ঘোষণা দিল ৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউনে কারখানা বন্ধ। হঠাৎ ৩০ তারিখ শুনলাম ১ তারিখ থেকে কারখানা খোলা ‘
তিনি বলেন, ‘বাস চলে না, এখন কেমনে আসমু ঢাকায় চিন্তায় পড়ে গেলাম। এরপর ট্রাক, প্রাইভেটকার ও বাসে মিলে আজ ভোর ৬টায় ঢাকায় নামছি। খাওয়া-দাওয়া ঘুম কিছুই নেই। টাকাও গেছে ডাবল। এই কষ্টের কথা কাকে বলব।’
উল্লেখ্য, এর আগে ঈদ ও করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে গত ১৯ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত টানা ১২ দিন কারখানা বন্ধ ছিল। সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল ৫ আগস্ট পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। কিন্তু পোশাক মালিকদের চাপে সরকার ১ আগস্ট থেকে কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। আর তাতে গ্রামে থাকা শ্রমিকরা হেঁটে, অটোরিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে কর্মস্থলে ফিরছেন।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, যে শ্রমিকরা গ্রামে আছেন, তারা লকডাউনের পর কাজে যোগ দেবেন। ঢাকার আশপাশ এলাকার শ্রমিকদের দিয়ে আমরা কারখানা চালু করব। তারপরও শ্রমিকরা চলে এসেছেন। আমাদের কী করার আছে বলেন?’
এমআই/ওএফ