নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অন্যতম ভোজ্যতেল। এর মূল্যবৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ | ফাইল ছবি

গত ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে শুরু করে। এখন পর্যন্ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম। দাম বাড়ার এ প্রবণতা যেন থামছেই না। কবে নাগাদ দাম কমবে সেই তথ্যও কেউ দিতে পারছেন না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষরা।

ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সহসাই কাটছে না ভোজ্যতেলের বাজারের অস্থিরতা। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ কারণে দেশের স্থানীয় বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়তি।

দুই লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ২০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ লিটার বোতলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে কেজি-প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা

খোলা বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরও বেশি। বাধ্য হয়ে অনেকে তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন | ছবি- সংগৃহীত 

রাজধানীর উত্তরার জহুরা মার্কেট, ১১নং কাঁচা মার্কেট, রাজলক্ষ্মী কাঁচাবাজারসহ একাধিক বাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ১১নং সেক্টরের কাঁচাবাজারে ঢু মারতেই ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তুষ্টের চিত্র চোখে পড়ে। হাবিব নামের এক ক্রেতা সয়াবিন তেলের অর্ডার দিলেও দাম বেশি হওয়ায় রাগ করে তা না নিয়ে ফিরে যান।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। কিন্তু বাংলাদেশে তেলের দাম বাড়ছে গত এক মাস ধরে। এখানেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই

এস এম নাজির হোসাইন, ক্যাব সহ-সভাপতি

রাস্তায় হাবিবের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, এভাবে দাম বৃদ্ধি পেলে আমরা কীভাবে এসব পণ্য কিনব? দুদিন পরপর যদি প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বাড়ে তাহলে তো না খেয়ে থাকতে হবে।

সরেজমিন বাজার পরিদর্শন এবং ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, দুই লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ২০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ লিটার বোতলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে কেজি-প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা।

মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্যাট/ট্যাক্স কমানোসহ সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখার দাবি ব্যবসায়ীদের | ছবি- সংগৃহীত  

জহুরা বাজার থেকে পাঁচ লিটার বোতলের তেল কিনে বাসায় ফিরছিলেন রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, নভেম্বরে কিনেছিলাম ৫১০ টাকায়। আজ (সোমবার) তা ৫৬০ টাকায় কিনতে হলো। এভাবে দাম বাড়লে আমাদের মতো সাধারণের অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে যাবে। দ্রুত সরকারের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এ প্রসঙ্গে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজির হোসাইন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। কিন্তু বাংলাদেশে তেলের দাম বাড়ছে গত এক মাস ধরে। এখানেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

চীন অনেক বেশি ভোজ্যতেল আমদানি করে তা মজুত করে ফেলেছে। এছাড়া কোভিড-১৯ এর প্রকোপ তো আছেই। তাই সহসাই বলা যাচ্ছে না কবে নাগাদ কমতে পারে পণ্যটির দাম

মো. জিয়াউর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক

ভোজ্যতেলের দাম কবে নাগাদ নিয়ন্ত্রণে আসবে— এ প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য পরামর্শক (দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আসলে সঠিক সময় বলা যাবে না। প্রায় ৯৫ ভাগ আমদানিনির্ভর পণ্য হলো ভোজ্যতেল। আন্তর্জাতিক বাজারেই দাম বেশি, তাই ক্রেতাকেও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। 

‘তবে কয়েকটি কারণে এ সময়ে ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজার গরম। এর মধ্যে অন্যতম হলো- চীন অনেক বেশি ভোজ্যতেল আমদানি করে তা মজুত করে ফেলেছে। এছাড়া কোভিড-১৯ এর প্রকোপ তো আছেই। তাই সহসাই বলা যাচ্ছে না কবে নাগাদ কমতে পারে পণ্যটির দাম।’

ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম টি কে গ্রুপ। সার্বিক বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. শফিউল আক্তার তাসলিম বলেন, কয়েকটি কারণে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর চীন অতিরিক্ত তেল আমদানি করেছে এবং তা মজুত করেছে। পাশাপাশি অনেক দেশে ফলনও কম হয়েছে। এছাড়া এখন মৌসুমের শেষ ভাগ, তাই বাজারেও সরবরাহ কম। নতুন মৌসুম ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। তখন হয়তো দাম কমতে পারে।

সরকার যদি ভ্যাট কমানোসহ সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখে তাহলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। ২০১২ সালের পর এত বেশি দামে ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের

মো. শফিউল আক্তার তাসলিম, পরিচালক, টি কে গ্রুপ

সহসা দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার যদি ভ্যাট কমানোসহ সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখে তাহলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। ২০১২ সালের পর এত বেশি দামে ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের— যোগ করে তিনি।

দোকানে সারি সারি ঝোলানো ভোজ্যতেলের বোতল | ছবি- ঢাকা পোস্ট

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। সংগঠনটির অফিস থেকে দাম বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারকেই দায়ী করা হয়। বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেই কেবল বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম কমতে পারে। 

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে কোনও পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পণ্যটির একটি নির্দিষ্ট দামও ঠিক করে দেন তারা। এখানেও হয়তো করা হয়েছে, কিন্তু তার বাস্তবায়নটা সেভাবে হচ্ছে না। যদি হতো তাহলে তো সবাই জানতে পারতেন যে এই দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হবে।

সরকারকে বাজার মনিটরিংটা আরও শক্ত হাতে করতে হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ইঙ্গিত পেলেই উৎপাদন ও সরবরাহকারীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবেন

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকারকে বাজার মনিটরিংটা আরও শক্ত হাতে করতে হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ইঙ্গিত পেলেই উৎপাদন ও সরবরাহকারীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার কবে নাগাদ নিয়ন্ত্রণে আসবে তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণেই দেশের বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এখনও সুনির্দিষ্ট কোনোকিছু ঠিক করা হয়নি, হলে আপনারা জানতে পারবেন।

টিসিবি যা বলছে

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির পক্ষ থেকে ট্রাকে ৮০ টাকা লিটারে তেল বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় তেল নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

টিসিবির বাজারচিত্র

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ১১ জানুয়ারি সয়াবিন তেল (লুজ) লিটারপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১১৩ থেকে ১১৬ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায়। এক মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর তা বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১০৪ টাকায়। পণ্যটির মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার ১২.২৫ শতাংশ। বাৎসরিক মূল্য বৃদ্ধির হার ২৪.৪৬ শতাংশ। 

পরিশোধিত করে ভোতলজাত করা হচ্ছে ভোজ্যতেল | ছবি- সংগৃহীত 

১১ জানুয়ারি সয়াবিন তেলের এক লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও একই দামে বিক্রি হয়েছে পণ্যটি। এক মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর তা বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। পণ্যটির মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার ৮.০৭ শতাংশ। বাৎসরিক মূল্য বৃদ্ধির হার ১৯.০৫ শতাংশ।

বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। এখনও সুনির্দিষ্ট কোনোকিছু ঠিক করা হয়নি, হলে আপনারা জানতে পারবেন

ড. মো. জাফর উদ্দীন, সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

১১ জানুয়ারি সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয় ৫৪০ থেকে ৫৮০ টাকায়। এক মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর তা বিক্রি হয় ৫১০ থেকে ৫৫০ টাকায়। পণ্যটির মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার ৬.৬০ শতাংশ। বাৎসরিক মূল্য বৃদ্ধির হার ১৪.৭২ শতাংশ।

১১ জানুয়ারি পাম অয়েলের (লুজ) প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১০২ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয় ৯৫ থেকে ৯৭ টাকায়। এক মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর তা বিক্রি হয় ৯১ থেকে ৯২ টাকায়। পণ্যটির মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার ১০.৩৮ শতাংশ। বাৎসরিক মূল্য বৃদ্ধির হার ২৪.৬৯ শতাংশ।

 ভোজ্য তেল

 মাপের একক

অদ্যকার মূল্য(টাকায়)

১সপ্তাহ পূর্বের মূল্য(টাকায়)

মাস পূর্বের মূল্য(টাকায়)

মাসিক মূল্যের

১বছর পূর্বের মূল্য(টাকায়)

বাৎসরিক মূল্যের

সয়াবিন তেল (লুজ)

প্রতি লিটার

    ১১৩

    ১১৬

    ১০৮

     ১১০

     ১০০

     ১০৪

(+)১২.২৫

       ৯১

       ৯৩

(+)২৪.৪৬

সয়াবিন তেল (বোতল)

৫ লিটার

   ৫৫০

   ৫৮০

    ৫৪০

    ৫৮০

    ৫১০

    ৫৫০

(+)৬.৬০

     ৪৭০

     ৫১৫

(+)১৪.৭২

সয়াবিন তেল (বোতল)

১ লিটার

    ১২০

    ১৩০

     ১২০

    ১৩০

     ১১০

     ১২০

(+)৮.৭০

     ১০০

      ১১০

(+)১৯.০৫

পাম অয়েল (লুজ)

প্রতি লিটার

    ১০০

    ১০২

      ৯৫

       ৯৭

       ৯১

      ৯২

(+)১০.৩৮

       ৮০

       ৮২

(+)২৪.৬৯

পাম অয়েল (সুপার)

প্রতি লিটার

    ১০২

    ১০৫

      ৯৮

     ১০২

      ৯৬

      ৯৮

(+)৬.৭০

      ৮৬

      ৮৮

(+)১৮.৯৭

বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের দর

আন্তর্জাতিক নিউজ পোর্টাল ইনডেক্স মুন্ডি ডটকম সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত মে মাসে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৬৮৪ ডলার, জুন মাসে তা বেড়ে হয় ৭৫৫ ডলার, জুলাইতে আরও বেড়ে হয় ৮২১ ডলার, আগস্টে বেড়ে হয় ৮৬৬ ডলার এবং সেপ্টেম্বরে দাম আরও বেড়ে হয় ৯০৬ ডলার। মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন পাম তেলের দাম ছিল ৫৭৬ ডলার, জুনে বেড়ে হয় ৬৫৬ ডলার, জুলাইতে আরও বেড়ে হয় ৬৯৪ ডলার, আগস্টে দাম বেড়ে হয় ৭৬০ ডলার, সেপ্টেম্বরে দাম আরও বেড়ে বিক্রি হয় ৭৯৮ ডলারে, অক্টোবরে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯১৪ ডলারে এবং নভেম্বরে তা আরও বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯৭৪ ডলারে।

কেন বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা- এফএও বলছে, তিন কারণে বিশ্ববাজারে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। সরবরাহ ঘাটতি, রপ্তানি কর বৃদ্ধি ও চীনের বিপুল ক্রয়ের কারণ। সয়াবিনের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ আর্জেন্টিনায় সরকারের সঙ্গে কৃষকদের দ্বন্দ্বে ধর্মঘট চলছে। এতে বন্দরের লজিস্টিকস সেবা বন্ধ হয়ে পড়ায় সয়াবিনসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ ধর্মঘট ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এছাড়া সয়াবিন রপ্তানিতে কর বাড়িয়ে ৩৩ শতাংশ করেছে আর্জেন্টিনা। এতে গত মঙ্গলবারও বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম ৩ শতাংশ বেড়ে হয় প্রতি বুশেল ১৩.৫৭ ডলার। এমনকি ওইদিন সর্বোচ্চ দাম ১৩.৭৩ ডলার পর্যন্ত ওঠে, যা ২০১৪ সালের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ।

এদিকে বিশ্ববাজার থেকে চীন বিপুল পরিমাণ সয়াবিন ক্রয় করলেও ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে খরায় উৎপাদন কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে ব্রাজিল ও আমেরিকা বিশ্ববাজারে সরবরাহ কমিয়েছে। সয়াবিনের নতুন মৌসুম শুরু হবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে। রপ্তানিকারক দেশগুলো নতুন ফসল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সরবরাহ বাড়াবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা

দেশে বছরে প্রায় ২৮ লাখ টন পরিশোধিত ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর আরও প্রায় দুই লাখ টন অভোজ্যতেল আমদানি করা হয়, যা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়। ২৮ লাখ টন ভোজ্যতেলের মধ্যে ৯০ শতাংশই আমদানি হয়। চাহিদার মোট ভোজ্য তেলের মধ্যে সয়াবিন তেলের অংশ হচ্ছে ৪০ শতাংশের মতো। পাম তেলের অংশ হচ্ছে ৫২ শতাংশের মতো এবং বাকিটা সরিষা ও অন্যান্য তেল।

একে/এমএআর/