একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্যাবলি নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।

কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হলে অথবা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হলে কিংবা গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। এছাড়া আরও কয়েকটি কারণে ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। 

এনবিআরের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের আয়কর নির্দেশিকা অনুসারে মোট ২২ কারণে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। 

তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেও অনেক সময় বিভিন্ন ভুল বা তথ্য ঘাটতির কারণে করদাতাকে নানা জটিলতায় পড়তে হয়। অনেক সময় ট্যাক্স অফিসের অডিটের মুখোমুখিও হতে হয়।

এসব কারণে করদাতাকে সবার আগে জানা প্রয়োজন কী কী ভুলের কারণে এমন জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এনবিআরের আয়কর বিভাগের সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুসারে ১৮ কারণে করদাতাকে সমস্যায় পড়তে হয়। এগুলো হলো-

১. আয়কর গণনায় ভুল হলে। কত টাকা আয়কর প্রযোজ্য আর কত টাকা সরকারের কোষাগারে জমা পড়ল ওই হিসাবে গড় মিল হলে।

২. আয়কর গণনায় ব্যাংক সুদ হিসাব ভুক্ত করা না হলে।

 ৩. আয়কর বিবরণী ফরমের সঙ্গে থাকা আইটি-১০ বি’তে সঞ্চয়পত্র দেখালে; কিন্তু সঞ্চয় পত্রের সুদ আয় হিসাবে না দেখালে। 

৪. আইটি-১০ বি’তে কৃষি জমি দেখালে; কিন্তু কৃষি খাতে আয় না দেখালে। 

৫. প্রয়ােজনীয় ডকুমেন্ট যেমন- বেতন বিবরণী, ব্যাংক বিবরণী, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের সমর্থনে ডকুমেন্ট রিটার্নের সঙ্গে জমা দেওয়া না হলে।

৬. আইটি-১০ বি’তে বাড়ি বা ফ্ল্যাট দেখালে এবং এসব ক্ষেত্রে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ভাড়া, বাড়ি ভাড়া খাতে আয় না দেখালে। 

৭. বাড়ি ভাড়া আয়ের সমর্থনে বাড়িভাড়া চুক্তিপত্র বা ভাড়া আদায়ের রশিদ সংযুক্ত না করলে। 

৮. মাসিক বাড়ি ভাড়া আদায় ২৫ হাজার টাকার বেশি হলে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে আদায় না হলে।

৯. আইটি-১০ বি’তে গাড়ি দেখানাে হলে- পারিবারিক খরচের যাতায়াত ব্যয়, ড্রাইভারের বেতন ও গাড়ি পরিচালনা ব্যয় তুলনামুলক কম দেখানাে হলে। 

১০. বাড়ি নির্মাণ ব্যয় মিউনিসিপালিটি রেট থেকে বেশি বা কম দেখানাে হলে। 

১১. আইটি-১০ বি’তে এফডিআর দেখানাে হলে; কিন্তু এফডিআর থেকে সুদের আয় হিসাবে দেখানাে না হলে।

১২. আগের বছরের থেকে আয় কম দেখানাে হলে, তার যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়া না থাকলে। 

১৩. পারিবারিক খরচ তুলনামূলক কম দেখানাে হলে। করদাতা যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানের জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী খরচ কম দেখানাে হলে। 

১৪. খাত ভিত্তিক পারিবারিক খরচের বিভাজন দেখানাে না হলে। 

১৫. ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়া বাক্তিগত ঋণের পরিমাণ বেশি নেওয়া বা দেওয়া দেখানাে হলে। 

১৬. অনেক বছর যাবত ফ্ল্যাটের অগ্রিম দেখানাে থাকলে। 

১৭. আয়কর রিটার্ন না মিললে অর্থাৎ IT-1IGA ফরমে ৬ নং পৃষ্ঠার ১৮ নং কলামে এবং IT 1IGA2016 ফরমের IT-10B2016 এর ২২ নং কলামে পজিটিভ বা নেগেটিভ সংখ্যা দেখানাে হলে। 

১৮. বিনিয়ােগের সমর্থনে সঠিক ডকুমেন্ট না দেখালে ও আয়কর রেয়াত গণনায় ভুল হলে।

আরএম/ওএফ