মো. রাসেল

‘ইভ্যালি নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী এবং এরচেয়েও বেশি আশাবাদী ইকমার্স নিয়ে। আমাদের একটু সময় দিন।’

শুক্রবার (১৬ জুলাই) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল। সেখানে তিনি ইভ্যালিকে আরেকটু সময় দিতে গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে ইভ্যালি প্রসঙ্গ এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে দেশের গণমাধ্যমেও বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমেও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এরমধ্যেই শুক্রবার দিনের বিভিন্ন সময় দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয় বন্ধ এবং হট লাইনেও তারা গ্রাহক ও মার্চেন্টদের ফোন রিসিভ করছে না। 

এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাতে ফেসবুকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে স্ট্যাটাস দেন ইভ্যালির এমডি রাসেল।

স্ট্যাটাসে রাসেল বলেন, ‘ইভ্যালির পক্ষে বিপক্ষে অনেক মতামত সোস্যাল মিডিয়াতে পেয়েছি এবং দেখেছি। এতদিন ইভ্যালির যে লস সেটা শুধুমাত্র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এর এই ইনভেস্টমেন্ট গিয়েছে। এখন ইভ্যালির অর্গানিক সেলস অনেক বেড়েছে। অনেকে এই সময় মতামত দিচ্ছেন বন্ধ করে পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি করা হোক।’

‘কিন্ত এখন তো আমরা অগ্রিম টাকা পাই না। গত দুই সপ্তাহ কিভাবে তাহলে পুরাতন অর্ডার থেকে ৪০ কোটি টাকার অধিক ডেলিভারি করা হলো? আমরা বড় বড় সেলারদের ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি পেমেন্ট দিয়েছি। তারা আমাদের পাশে থাকতে চান। কিন্ত মিডিয়া অথবা সোস্যাল মিডিয়া যখন ডেসটিনি এর মত কোম্পানির সাথে তুলনা করেন, তখন যে কেউ ই ভয় পেয়ে যান। আমরা বিজনেস সবাই বুঝি। এটা একটা চলমান সম্পর্কে থাকার বিষয়। সেলস থাকলে সেলার থাকবে এবং সেলার থাকলে পণ্য থাকবে।’

রাসেল বলেন, ‘আমাদের এই বিজনেস ডেভেলপমেন্টে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল দেশি অথবা বিদেশি বিনিয়োগ। কেউ কী আমাকে দয়া করে কোনো আইনি ধারা উল্লেখ করতে পারেন, যেটি হয়তো আমার অজান্তেই মিস করে গেছি। যে কারণে আপনি বলতে পারেন, ইভ্যালি অবৈধ। (আমি এই সংক্রান্ত বিস্তারিত আরও লিখব)।’

‘যদি না-ই হয়, মিডিয়ায় অথবা সোস্যাল মিডিয়ায় আমাকে ক্রিমিনাল না বানিয়ে বিচার না করার অনুরোধ করতে পারি শুধু। আমি বাংলাদেশের সব বড় গ্রুপ এখন যাচ্ছি। আমার হয়তো পুঁজি ঘাটতি। কেউ পুঁজি দিলেই কিন্তু কাল আমাকে সবাই হিরো বলত। যেই জিনিসটা ইভ্যালি অর্জন করতে চেয়েছিল, ইভ্যালির একদম সেটার দারপ্রান্তে। এতো কিছুর পর নতুন নীতিমালার আলোকে ইভ্যালির সেলস ১০০ কোটি টাকা (পেইড)। এই সময় এসে গঠনমূলক অথবা পরামর্শমূলক আলোচনা অবশ্যই সবার উপকার হবে।’

‘ইভ্যালি নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। এবং এর চেয়েও বেশি আশাবাদী ইকমার্স নিয়ে। বিদেশী Amazon আসলে আমরা খুশি হব স্বাভাবিক।  কিন্ত দেশের কেউ ইকমার্স লিড দিবে এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত। কারণ আমরা এখন সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল জাতি। আমাদের একটু সময় দিন।’

এদিকে ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বেশ কিছু পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাউচারের বিপরীতে পাওনা অর্থ পরিশোধ না করায় তারা পণ্য দিচ্ছে না। সম্প্রতি ইভ্যালির গিফট ভাউচারে কেনাকাটার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে।

এর আগে নানা অনিয়মের কারণে ইভ্যালিসহ ১০টি অনলাইন মার্চেন্টে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের লেনদেন স্থ‌গিত করেছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এম‌টি‌বি), ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংক একই নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাশাপাশি ইউসিবি ও সিটি ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের এসব অনলাইন মার্চেন্টে লেনদেনের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

ইভ্যালির সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা।

এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

ইভ্যালির ওপর করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের ৪ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনতে গত ৪ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয় আদেশ দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে, ভিন্ন শহরে থাকলে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে, মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই গ্রাহকের পণ্য বা সেবা বুঝিয়ে না দিয়ে বিক্রয় মূল্য পাবে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেমেন্ট নির্দেশনা জারি করে।  

এসএইচআর/ওএফ