অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ট্যাক্স ফাইল, ব্যাংক হিসাব, লেনদেন রেকর্ড পত্র, অডিট রিপোর্ট ও নিবন্ধিত মার্চেন্টের তালিকাসহ তলব করা বেশকিছু নথিপত্র এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কব্জায়।   

দুদকের অনুসন্ধান টিমের তলব করা এসব নথিপত্র গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। রোববার (১১ জুলাই) দুদকের জনসংযোগ দফতর ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের পণ্য না দেওয়া কিংবা অন্য পণ্য প্রদান করা, রিফান্ডের অর্থ পেতে দেরি হওয়া, যথাসময়ে গ্রাহকসেবা না পাওয়া ইত্যাদি অভিযোগে ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পুরাতন অভিযোগের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয় ইভ্যালির গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস না পাওয়ার বিষয়টি।

অনুসন্ধান পর্যায়ে এ পর্যন্ত দুদকের কাছে যেসব নথিপত্র পৌঁছেছে বলে জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছে- ইভ্যালির ট্যাক্স ফাইল, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের ট্যাক্স ফাইল, সর্বশেষ দুই বছরের অডিট রিপোর্ট, ইভ্যালির নিবন্ধিত মার্চেন্টের তালিকা, পেন্ডিং অর্ডারের তালিকা, ব্যাংক হিসাব লেনদেন সংক্রান্ত বেশকিছু রেকর্ড পত্র ও সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে এমন ১০টি মার্চেন্টের তালিকা।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান নথি চাওয়া হয়। অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। ওই অভিযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ সব বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবে এ টিম।

দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালামের সমন্বয়ে গঠিত টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ৮ জুলাই দুদকের অনুসন্ধান টিমের সুপারিশে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও এমডি মো. রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এর আগে ৪ জুলাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও প্রতীয়মান হয়, ইভ্যালি তাদের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক এবং মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে গৃহীত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরএম/ওএফ