২২ কারণে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক
একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্যাবলি নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি হয়; তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। তবে এছাড়াও আরও অনেক কারণে ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন : আয়কর রিটার্ন দাখিলে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২১-২০২২ অর্থবছরের আয়কর নির্দেশিকা অনুসারে মোট ২২ কারণে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। আর যদি করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হন তাহলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪, ৭৩ ও ৭৩এ ধারা অনুযায়ী জরিমানা, ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপযোগ্য হবে।
যে ২২ কারণে করদাতাদের আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হবে-
১. ১২ ডিজিটের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) গ্রহণ করা থাকলে,
২. করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে,
৩. যদি করদাতার পূর্ববর্তী তিন বছরের যেকোনো বছর কর নির্ধারণ হয়ে থাকে বা তার আয় করযোগ্য হয়ে থাকে,
৪. করদাতা যদি কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হন,
৫. করদাতা যদি কোনো ফার্মের অংশীদার হন,
৬. করদাতা যদি সরকার বা সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, সত্ত্বা বা ইউনিটের বা প্রচলিত কোনো আইন, আদেশ মাধ্যমে গঠিত কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, সত্তা বা ইউনিটের কর্মচারী হয়ে মাসে ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল বেতন আহরণ করে থাকেন,
৭. করদাতা যদি কোনো ব্যবসায় বা পেশায় নির্বাহী কিংবা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হন,
৮. করদাতার আয় যদি কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য হয়ে থাকে,
৯. করদাতা যদি মোটরগাড়ির মালিক হন,
১০. করদাতা যদি কোনো সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ হতে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে কোনো ব্যবসা বা পেশা পরিচালনা করে থাকেন,
১১. করদাতার যদি মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ থাকে,
১২. করদাতা যদি চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসেবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধিত হন;
১৩. করদাতা যদি আয়কর পেশাজীবী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিবন্ধিত হন,
১৪. করদাতা যদি কোনো বণিক বা শিল্প বিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংঘ বা সংস্থার সদস্য হন,
১৫. করদাতা যদি পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের কোনো পদে বা সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হয়ে থাকেন,
১৬. করদাতা যদি কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কোনো স্থানীয় সরকারের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন;
১৭. করদাতা যদি কোনো কোম্পানির বা কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালনা পর্ষদে থাকেন,
১৮. করদাতা যদি মোটরযান, স্থান, বাসস্থান বা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড ইকোনমিক এক্টিভিটিজে অংশগ্রহণ করেন,
১৯. করদাতা যদি লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিক হন,
২০. সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে মোট বিনিয়োগ দুই লাখ টাকা অতিক্রম করলে,
২১. দুই লাখ টাকার বেশি পোস্টাল সঞ্চয় হিসাব খুলে থাকলে এবং
২২. সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন করে থাকলে আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।
তবে আয়কর রিটার্ন নির্দেশিকা অনুসারে নিম্নরূপ ব্যক্তিকরদাতাদের রিটার্ন দাখিল করতে হবে না-
১. বাংলাদেশে ফিক্সড বেজ নেই এমন অনিবাসীকে,
২. জমি বিক্রয়ের জন্য ১২ ডিজিটের টিআইএন গ্রহণ করেছেন কিন্তু করযোগ্য আয় নেই এবং ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের জন্য ১২ ডিজিটের টিআইএন গ্রহণ করেছেন কিন্তু করযোগ্য আয় নেই এমন ব্যক্তি।
আরএম/এইচকে