প্রবাসী আয়ে রেকর্ড
করোনা মহামারিতে আমদানি-রফতানি তেমন চাঙ্গা না থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশি মুদ্রায় এ রেমিট্যান্সের পরিমাণ দুই লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে। সোমবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
• রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স
• প্রবাসী আয়ে ৩৬.১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
• জুন মাসে এসেছে ১৯৪ কোটি ডলার
• বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নগদ প্রণোদনা ও করোনায় বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের কারণে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। পাশাপাশি মহামারিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কারণে প্রবাসীরা জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
রেমিট্যান্স বাড়ার প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ-উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি মনে করি বিশেষ তিনটি কারণে রেমিট্যান্স বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে প্রথমটি হলো- মহামারিতে অনেক প্রবাসী কাজ হারিয়েছেন আবার অনেকের কাজ হারানোর সম্ভাবনা আছে; তাই তাদের সঞ্চিত অর্থ যা ছিল তা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় হচ্ছে- সরকারের পক্ষ থেকে দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে অনেকে হুন্ডি না করে বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন। এছাড়া করোনার কারণে বিদেশে যাতায়াত কমে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন প্রবাসীরা। এসব কারণেই রেমিট্যান্স বেড়েছে।
তবে এটি ধরে রাখতে হলে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ সরকারের উদ্দেশে বলেন, এখনও আমরা যেসব দেশে লোক পাঠাই সেখানকার অবস্থা যদি উন্নতি না হয় তাহলে আগামীতে সেখানে প্রবাসী আয় কমে যাবে। তাই দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ওপর জোর দিতে হবে। যাতে প্রবাসে শ্রমিকরা বেশি টাকা আয় করতে পারেন। পাশাপাশি বিদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তায় আমাদের কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষে মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৪ কোটি ডলার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ফলে সদ্য সমাপ্ত পুরো অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি।
গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা সরকারি ৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে ৬১০ কোটি ৬২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। বিশেষায়িত একটি ব্যাংকে এসেছে ৪১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বেসরকারি ৩৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৮১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৮ ব্যাংকে এসেছে ১১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
বাংলাদেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে একক ব্যাংক হিসেবে সব চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে। ব্যাংকটিতে ৭৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮২ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে অগ্রণী ব্যাংকে। ২৪৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এনে তৃতীয় অবস্থানে আছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। সোনালী ব্যাংকে এসেছে ১৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলের প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে ওই অংক ছিল এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে।
এদিকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। জুন মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় চার হাজার ৬৪২ কোটি ডলার। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুদ এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সাড়ে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেওয়ার অফার দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।
এসআই/এইচকে