করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। শনিবার (২৬ জুন) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, সোমবার (২৮ জুন) থেকে সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও পোশাক কারখানাগুলো খোলা থাকবে। বর্তমান নিয়মে কারখানায় কাজ হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২৮ থেকে ৩০ জুন এ তিন দিন আন্তঃজেলা বাস চলাচল করতে পারবে। ব্যাংক ক্লোজিং এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পাশের পরদিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকডাউন হবে। সড়ক পথে কোথাও কোনো গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়িও চলতে পারবে না। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও মাঠে থাকবে।

সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও বিটিএমইএ সভাপতিসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার থেকে লকডাউন শুরু হলেও বৃহস্পতিবার কঠোরভাবে লকডাউন পালন হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা কারখানাগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করব।

এর আগে এক ভিডিও বার্তায় মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানা খোলা থাকলে শ্রমিকরা নিয়মের মধ্যে ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকবেন। কারখানা যদি বন্ধ থাকে শ্রমিকরা ছোটাছুটি করবে, দেশের বাড়িতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। তাই কারখানা খোলা রাখা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছি।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সামনে ঈদ, শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিতে হবে। কারখানা বন্ধ থাকলে আমরা সে চাপ নিতে পারব না। এখন বায়ারদের অর্ডারের চাপ আসছে, লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকলে বায়াররা চলে যাবে। সবকিছু মিলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কারখানা খোলা রাখছি।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে এবং আগামী ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে সাত দিন সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে সরকার। তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

শনিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অনলাইন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। রোববার (২৭ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা বলেন, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সীমিত পরিসরে লকডাউন কার্যকর করবে সরকার। বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের জন্য পুরোপুরি লকডাউন থাকবে দেশ।

এর আগে শুক্রবার (২৫ জুন) প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সোমবার (২৮ জুন) থেকে পরবর্তী সাত দিন সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি থাকবে বলে ঘোষণা দেন। একদিনের মাথায় এসে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

লকডাউনে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী যান ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে শুধু যানবাহন চলাচল করতে পারবে। জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবেন না। গণমাধ্যম লকডাউনের আওতা বহির্ভূত থাকবে— জানান তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

গতকাল শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সোমবার থেকে আগামী এক সপ্তাহের জন্য আমরা কঠোর বিধিনিষেধ দেব, প্রয়োজন হলে আমরা সেটি আরও বাড়াব।’ গত ২৪ জুন কোভিড-১৯ কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’-এর সুপারিশ করা হয়।

এমআই/ওএফ