ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর যাত্রা শুরু ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ। ই-মানি সৃষ্টি, অর্থ লেনদেন, পেমেন্ট থেকে শুরু করে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম প‌রিচালনা কর‌ছে প্রতিষ্ঠানটি। শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সেবা। ত‌বে দুই বছ‌রের বে‌শি সময় পার হ‌লেও এখন পর্যন্ত লাইসেন্স নি‌তে পা‌রে‌নি প্রতিষ্ঠানটি। বারবার সময় নি‌য়েও শর্ত পূর‌ণ কর‌তে পা‌রে‌নি নগদ। এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আ‌রও ছয় মাস সময় চায় ডাক অধিদফতর।

জানা গে‌ছে, নগদ-এর মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম প‌রিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদন চলতি মাসের ৩০ জুন শেষ হবে। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তুতি নি‌তে পা‌রে‌নি প্রতিষ্ঠানটি। ফ‌লে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নগদ-এর অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদনের আবেদন করেছে ডাক অধিদফতর। করোনায় অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকা ও সংশ্লিষ্ট আইন ও নিয়মনীতি সংশোধনের জন্য এ অতিরিক্ত সময় চেয়েছে তারা।

এ‌র আগে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকের আয়োজন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়।

প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষে ডাক বিভাগের অধীনে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হিসেবে নগদ-কে প্রতিষ্ঠিত করার প্রক্রিয়া বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়ার বিষয়ে বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনায় লকডাউন থাকায় মন্ত্রণালয়গুলোয় প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ডাক বিভাগ। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল দাফতরিক কাজও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

লকডাউনের কারণে সরকারি সাধারণ ছুটি থাকা এবং সে কারণে বৈঠক করতে না পারার কারণেও সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের কার্যক্রম শেষ করতে বাড়তি সময় লেগেছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। যার ফলে ডাক বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত কিছু বিষয় সম্পন্ন করতে পারেনি। বিষয়গুলো সম্পন্ন করতে বেশ কিছু বিষয়ে অর্থ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনেরও প্রয়োজন রয়েছে। তা ছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে একটি মিটিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের জন্য মেমরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন (এওএ), আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন (এওএ) এবং ভেন্ডর এগ্রিমেন্টের খসড়া এরই মধ্যে তৈরি হলেও সেটি সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সূত্রটি বলেছে, এই বিষয়গুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে অনুমোদন হয়ে তারপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যাবে। এরপর লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ পরিচালনার জন্য যে অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদন দেয় তার মেয়াদ চলতি মাসের ৩০ তারিখ শেষ হবে। সেক্ষেত্রে দেশের দ্বিতীয় গ্রাহক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটরটির পরিচালন সংক্রান্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং প্রায় পাঁচ কোটি গ্রাহকের সেবা অব্যাহত রাখার জন্যই বৈঠক থেকে সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে বর্ধিত সময়ের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন স্বাক্ষরিত আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়‌টি নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জান‌তে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্ট‌কে বলেন, তা‌রা সময় বাড়া‌নোর আবেদন করেছে। বিষয়‌টি পর্যা‌লোচনা ক‌রে দেখা হ‌বে। এরপর পরবর্তী‌তে করণীয় বিষ‌য়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নে‌বে।

জানা গে‌ছে, ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে নগদের লাইসেন্সের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হয় গত বছর। প‌রে গত বছরের ১৫ মার্চ বাংলা‌দেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়ে ছয় মাসের জন্য নগদের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে চিঠিতে সাতটি শর্তও জুড়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্সের শর্ত পূরণ করতে পারেনি ডাক বিভাগ। প‌রে তা‌দের দু দফা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথ‌মে আরও ছয় মাস, প‌রে আরও তিন মাস সময় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে হিসেবে নগদের কার্যক্রম চালানোর অনুমোদনপত্রের মেয়াদ জু‌নে শেষ হচ্ছে।

এদিকে ‘নগদ’-এর কার্যক্রম শুরুর দুই বছর বে‌শি হ‌লেও ‘নগদ’ নিজের আইনি সত্তা স্পষ্ট করতে পারেনি। নগদের লোগোতে বলা হয়েছে, এটি ‘ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন’। এক্ষেত্রে দাবি করা হয়, ২০১০ সালের সংশোধিত ডাক আইনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে সেবাটি। নগদ বর্তমানে অর্থের লেনদেনের পাশাপাশি পেমেন্টের দায়িত্বও পালন করছে। এ নিয়ে আপত্তি তুলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য হলো, ডাক বিভাগ অর্থ লেনদেন করতে পারলেও কোনোভাবেই পেমেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারে না। প‌রে ডাক বিভাগের আইন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নীতিমালার অধীনে নগদ-কে পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

নগদ পরিচালনা করছে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। গ্রাহকদের কাছে থেকে অর্থ গ্রহণ, ই-মানি সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রতিটি কার্যক্রমই পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি এ কোম্পানির মাধ্যমে। বর্তমা‌নে নগদ-এ দৈনিক ৬৫০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করছে।

২০১১ সালে সবার আগে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস দিয়ে বাংলাদেশ আর্থিক সেবার এই খাতটিতে প্রবেশ করে। পরে একই বছর বিকাশও সেবা শুরু করে। তবে লাইসেন্সের বিষয়টি আসে আরও পরে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক সেবাপ্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের লাইসেন্স দি‌য়ে‌ছে। এর ম‌ধ্যে বর্তমা‌নে কার্যক্রম চালা‌চ্ছে ১৫টি প্র‌তিষ্ঠান।

এসআই/এইচকে