সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী।

থানায় বা আদালতে কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে বাদী বা অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি) অনুলিপি দাখিল করতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। নতুন এই আদেশে প্রবাসীদের সহায় সম্পদ রক্ষায় জটিলতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবাসীদের নিয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী।

আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করে এসব কথা বলেন তিনি। সেকিল চৌধুরী স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজের এ মতামত লিখিতভাবে ঢাকা পোস্টকে দিয়েছেন।

সেকিল চৌধুরী জানান, পৃথিবীর ১৬৮ দেশে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। এরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। চলতি অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে অনেক সময় এই প্রবাসীদেরই পড়তে হচ্ছে নানা জটিলতায়। আবার কখনো তারা প্রতারিত হচ্ছেন নিজের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমেই। শেষ ভরসা হিসেবে প্রবাসীরা কখনো কখনো আদালতের দ্বারস্থ হন। আর এই শেষ ভরসাস্থলেই তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা।

গত ১৪ জুন হাইকোর্ট এক আদেশে বলেছেন, এখন থেকে মামলা করতে বাদীর জাতীয় পরিচয় পত্র লাগবে (পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী)।

সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন বলেন, দেশে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য এনআইডি বানানো কষ্টসাধ্য ‘নয়’ এবং অনেক ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। কিন্তু প্রবাসীদের জন্য এই আদেশ সৃষ্টি করবে বিরাট জটিলতা। কারণ এক কোটি ৬০ লাখ প্রবাসীর বেশিরভাগের কাছে নেই এনআইডি। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের জন্য এনআইডি প্রদানের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। তবে কাজটি অনেক কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। প্রবাসীরা যদি এনআইডি ছাড়া আদালতের দ্বারস্থ হতে না পারে তাহলে তাদের সহায়-সম্পত্তি রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থলটিতে পৌঁছাতে সৃষ্টি হবে জটিলতা। এই সুযোগে প্রভাবশালীরা প্রবাসীদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় আরও বেশি সফল হবে।

সামগ্রিক বিবেচনায় আপাতত এই আদেশটি থেকে প্রবাসীদের বাইরে রাখা যায় কিনা এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার বলে জানান সেকিল চৌধুরী।

উল্লেখ, মামলা করতে এনআইডি বাধ্যতামূলক করে ১৪ জুন (সোমবার) আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই আদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে থানায় বা আদালতে কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে বাদী বা অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি দাখিল করতে হবে।

জানা গেছে, রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯টি ‘ভুয়া’ মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে দায়ের করা রিটের শুনানিতে ভুয়া মামলা ঠেকাতে আদালত এ আদেশ দেন।

বৃদ্ধ একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশও দেন হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে সংস্থাটিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বসির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এর আগে গত ৭ জুন নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা মাথায় নিয়ে রিট করেন শান্তিনগরের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চন। রিটে গায়েবি মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে সিআইডির প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একরামুল আহসান কাঞ্চন রিটে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

এসআই/এমএইচএস