ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস বিক্ষোভ করেছিল কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তাদের এ সহিংস আন্দোলনের অর্থ জোগান দাতাদের খুঁজছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে সংগঠনের ৪৬ নেতা-কর্মীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে আর্থিক এ গোয়েন্দা সংস্থা।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৬ মার্চ দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ওই সফরের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। এ নিয়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ হয় তাদের। 

বিশেষ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় বিভিন্ন অফিস, রেলস্টেশন ও থানায়। কয়েক দিনের আন্দোলনে ১৩ জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ আহত হয়। ওই সময় এসব নাশকতার জন্য সরকার হেফাজতকে দায়ী করে। পরে সংগঠনের অনেক নেতাকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

তাদের সহিংস আন্দোলনে কোনো সন্ত্রাসী অর্থায়ন হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে গত ৫ এপ্রিল হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, সাবেক মহাসচিব প্রয়াত নূর হুসাইন কাসেমী এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজত নেতা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ শীর্ষ ২৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল বিএফআইইউ। 

একই সঙ্গে ৩০টি মাদরাসার ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন করে আরও ৪৬ জন হেফাজত নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।

যাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে

নতুন করে যাদের ব্যাংক হিসাবের সার্বিক তথ্য চাওয়া হয়েছে তাদের সবাই হেফাজতের সাবেক কমিটিতে ছিলেন। ওই ৪৬ জন হলেন- হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, সাবেক প্রচার সম্পাদক গাজী ইয়াকুব উসমানী (কসবা), সাবেক সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব আহমেদ, সাবেক সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, সক্রিয় সমর্থক মো. আহমদ আলী কাসেমী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাসির উদ্দিন মনির।

ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বশীলদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগরী হেফাজতের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সাবেক অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সদস্য মাওলানা নূর হোসাইন নূরানী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, সাবেক সহকারী অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, সাবেক শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক মাওলানা হারুন ইজাহার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা জালাল উদ্দিন।

এছাড়াও এই তালিকায় আরও রয়েছেন মাওলানা এরশাদ উল্লাহ কাসেমী, হাফেজ মাওলানা জুনায়েদ কাসেমী, মাওলানা মুহাম্মদ মহসিন মিয়া, মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী, জাকারিয়া নোমান কাসেমী, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আলী হাসান উসামা, নাসির উদ্দিন মনির, আহসান উল্লাহ মাস্টার, আসাদুল্লাহ আসাদ, মাওলানা মুসা বিন ইসহাক, ফজলুর রহিম কাসেমী, মাওলানা এহসানুল হক, খলিলুর রহমান মাদানী, আবু আম্মার আব্দুল্লাহ, আজহারুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী, ওবায়দুল্লাহ কাসেমী, মুফতি আজহারুল ইসলাম, মাওলানা প্রফেসর ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আশরাফ মাহাদী, মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ জামী, মাওলানা শাহ আকরাম আলী, মাওলানা মুফতি কামরুজ্জামান, মাওলানা মুফতি কেফায়েত উল্লাহ, ইনামুল হাসান ফারুকী, মাওলানা মুহসিনুল করিম, মাওলানা জয়নাল আবেদীন বাকাইলী ও মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী।

চিঠিতে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নামে খোলা হিসাবের যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদিসহ হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, টিপি, শুরু হতে লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি পাঠাতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সোমবার হেফাজতের ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামুনুল হকসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। নতুন কমিটিতেও আমির করা হয়েছে জুনাইদ বাবুনগরীকে। ৯ জন হয়েছেন নায়েবে আমির। মহাসচিব করা হয়েছে মাওলানা হাফেজ নূরুল ইসলামকে। 

এসআই/ওএফ