বাজেটের আগাম প্রভাব বাজারে
আগামীকাল নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এর আগেই তেল-পেঁয়াজ, চাল-ডাল, আটা-ময়দাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ ও তেলের দাম। নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে চাল আর ডালের দাম। একইভাবে বাজেটকে সামনে রেখে বাড়ছে রসুন, আদা, তেজপাতা এবং আলুর দামও।
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে তিন টাকা বাড়ানোর পর গত সপ্তাহে নতুন করে তেলের দাম লিটারে ৯ টাকা বেড়েছে।
রামপুরা বাজারে চালের ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন চাল বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমেছিল। এখন আবার বাড়ছে। কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মালিবাগের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ীরা বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। রসুন বেড়েছে ১০ টাকা। একইভাবে বেড়েছে আদা-তেজপাতারও দাম।
ক্রেতারা বলছেন, একদিকে করোনায় আয় বন্ধ, অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। আর কতদিন এভাবে চলতে পারবো জানি না।
মঙ্গলবার (১ জুন) রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ এবং বাড্ডার বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকান বন্ধ, রাস্তায় রাস্তায় পানি। কিছু দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। বৃষ্টিতে মালামাল ভিজে গেছে কিনা তা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসায়ীরা বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পর বিক্রি কমেছে। ফলে আমাদের ব্যবসাও কমেছে। ক্রেতাদের সাথে দামাদামি করতে হয়।
মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্যের দাম জানতে চাইলে বলেন, সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ১৫৩ টাকায়। তবে পুরাতন তেল থাকলে বিক্রি করছি ১৪৫ টাকায়। একইভাবে তারা খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ১৩০ টাকা। পামওয়লের তেল বিক্রি করছেন ১২০ টাকা লিটার। আর ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ৭২৫-৭৩০ টাকায়।
এ বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, গত দুই তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম। গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করা পেঁয়াজ এখন বিক্রি করছি সর্বনিম্ন ৫৫ টাকায়। একটু ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৬০ টাকায়।
রামপুরা বাজারে ব্যবসায়ী আনিসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমদানি রসুন বিক্রি করছি ১২৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। আর দেশি রসুন বিক্রি করছি ৮৫ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এই রসুন ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। আমদানি করা আদার কেজি এখন ১২৫-১৩০ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৮০-৯০ টাকা। একই বাজারে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে।
এসব বাজারে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মাঝারি ধরনের পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৮ টাকায়। দু’দিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫২ টাকায়। মোটা চাল স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকা কেজিত; যা ছিল ৪৪-৪৬ টাকা।
চালের পাশাপাশি আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। ৩৫ টাকা কেজি প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকায়। ৩৬ টাকা কেজির খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৬ টাকা কেজিতে; যা গত সপ্তাহ ছিল ৪২-৪৪ টাকা কেজি।
ডালের মধ্যে বড় দানার মশুরের ডাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। আর মাঝারি মানের মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে। আর ছোট দানার মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২২-২৫ টাকা কেজিতে।
মেরুল বাড্ডায় বাজার করতে যাওয়া রিমন হাওলাদার বলেন, পেঁয়াজ, চাল, ডাল কিনতে এসেছিলাম। এখন দেখি সব কিছুর দাম ‘অলমোস্ট ডাবল।’
সার্বিক বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অধ্যাপক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর ব্যবসায়ীরা বাজেটের আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে ফেলেন। এবারও তাই হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে ক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে বাধ্য করছেন। সরকারের উচিৎ যে বা যারা এটা করছে তাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
এমআই/এনএফ