৫০ বছরে বাজেট বেড়েছে ৭৬৮ গুণ
স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়ও উজ্জ্বল অবস্থানে। অর্থনীতির অগ্রযাত্রার এরই মধ্যে স্বীকৃতি মিলেছে বিশ্ব সভায়। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) চূড়ান্ত সুপারিশে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। যার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলবে ২০২৬ সালে।
এই অগ্রযাত্রা সূচনা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। স্বাধীনতা পরবর্তী এক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার প্রথমবারের মতো ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা দেয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে যার আকার হতে যাচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা প্রথম বাজেট থেকে ৭৬৭.৯৬ গুণ বেশি।
বিজ্ঞাপন
অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সূত্রানুযায়ী, ১৯৭২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৯ বছরে দেশে ৪৯টি বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা দেন।
২০১৮ সালে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, বাজেটের আকারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল বিশ্বে ৬৪তম। যার অগ্রযাত্রা আরও এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে কখনও প্রধানমন্ত্রী, কখনও উপদেষ্টা, আবার কখনও রাষ্ট্রপতিও বাজেট ঘোষণা করেছেন। এখন পর্যন্ত ১২ জন ব্যক্তি দেশের ৪৯টি বাজেট পেশ করেছেন।
এর মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ তিনটি, আজিজুর রহমান মল্লিক একটি, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিনটি, এম এন হুদা একটি, এম সায়েদুজ্জামান চারটি, মেজর জেনারেল এম এ মুনিম দুটি, ওয়াহিদুল হক একটি, শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছয়টি, মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম দুটি, এম সাইফুর রহমান ১২টি ও আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি ও আ হ ম মুস্তফা কামাল দুটি বাজেট পেশ করেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) আ হ ম মুস্তফা কামাল তার তৃতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন।
প্রথম বাজেটের পর এক হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল তিন বছর। ১৯৭৪-৭৫ তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষণা দেন এক হাজার ৮৪.৩৭ কোটি টাকার বাজেট।
বাজেটের আকার হাজার কোটি থেকে এক লাখ কোটিতে উন্নীত হতে সময় লেগেছে ২১ বছর। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। এর ১০ বছরের মাথায় একই ২০১৯-২০ সালে একই সরকার ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
স্বাধীনতার পর থেকে ৫০টি বাজেট পেশকারীর নাম ও বাজেটের আকার :
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকা; ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে তাজউদ্দীন আহমদ ৯৯৫ কোটি টাকা ও ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে তাজউদ্দীন আহমদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে ড. আজিজুর রহমান ১ হাজার ৫৪৯.১৯ কোটি টাকা; ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে জিয়াউর রহমান ১ হাজার ৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা; ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে জিয়াউর রহমান ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা ও ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে ড. এম এন হুদা ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা; ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা; ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে এম সাইদুজ্জামান ৬ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা; ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে এম সাইদুজ্জামান ৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা; ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে এম সাইদুজ্জামান ৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা ও ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে এম সাইদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা; ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে ড. ওয়াহিদুল হক ১২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা ও ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
১৯৯১-৯২ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা; ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ১৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা; ১৯৯৩-৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা; ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ২০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা ও ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ২৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে এসএএমএস কিবরিয়া ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা; ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এসএএমএস কিবরিয়া ২৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা; ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে এসএএমএস কিবরিয়া ২৯ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা; ১৯৯৯-০০ অর্থবছরে এসএএমএস কিবরিয়া ৩৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা; ২০০০-০১ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা ও ২০০১-০২ অর্থবছরে এসএএমএস কিবরিয়া ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
২০০২-০৩ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ৪৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা; ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ৫১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা; ২০০৪-০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা; ২০০৫-০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা ও ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
২০০৭-০৮ অর্থবছরে এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
২০০৯-১০ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা; ২০১০-১১ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা; ২০১১-১২ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১ লাখ ৬৫ হাজার ০০০ কোটি টাকা; ২০১২-১৩ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা; ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা; ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে আ হ ম মুস্তফা কামাল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা; ২০২০-২১ অর্থবছরে আ হ ম মুস্তফা কামাল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন ও আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
আরএম/ওএফ