ভ্যাট ফাঁকির ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা জমা দিল লুবনান
ভ্যাট ফাঁকির ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিল বৃহৎ পোশাক বিপণনকারী লুবনান।
ভ্যাট গোয়েন্দার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১ জুন) সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে ট্রেজারি চালানের বিষয়ে লুবনান ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরকে অবহিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মমিনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে তাদের ভুল স্বীকার করে এবং ভ্যাট গোয়েন্দার দাবিনামা মেনে নিয়ে তদন্তে উত্থাপিত ৪ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার ৪৪২ টাকা স্বপ্রণোদিত হয়ে জমা দিয়েছে।
এ টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির অংশ এবং সময়মতো তা সরকারি কোষাগারে জমা না করায় মাসিক ২ শতাংশ হারে ১ দশমিক ১১ কোটি টাকা সুদ আরোপ করা হয়েছিল। লুবনান কর্তৃপক্ষ এখন থেকে ভ্যাট আইন পরিপালনে আরও সচেষ্ট হবেন মর্মে অঙ্গীকারও করেছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, একজন গ্রাহকের সুনির্দিষ্ট ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মো. মাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটির কারখানা এবং অফিসে অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠানটির মূলত তিনটি ব্র্যান্ড হলো- রিচম্যান আ্যাপারেলস, ইনফিনিটি মেগা মল ও লুবনান এথনিক ওয়্যার। রাজধানীর বড় বড় শপিংমলসহ সারা দেশে ১০৮টি বিপণী কেন্দ্র রয়েছে তাদের।
অভিযানে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট ১০৮টি শাখার জমাকৃত মূসকের সারসংক্ষেপের হিসাব (রিটার্ন অনুযায়ী), বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট, করপোরেট চালানের কপি ও আমদানি এলসিগুলোর তথ্যসহ আনুষঙ্গিক বাণিজ্যিক দলিল জব্দ করা হয়। একইসাথে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য দফতর থেকে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটসংক্রান্ত দলিল সংগ্রহ করা হয়। তদন্ত শেষে ভ্যাট গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানটির মূসক ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে।
তদন্তে দেখা যায়, বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৭ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ৪১ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৮ টাকার ফাঁকি উদঘাটিত হয়।
অন্যদিকে, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ লাখ ১৩ হাজার ৭১২ টাকার ফাঁকি উদঘাটন করা হয়। এছাড়া উৎসে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৫ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটিত হয়।
তদন্তে বিভিন্ন মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪ টাকা। এতে জরিমানা-সুদ ১ কোটি ১০ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৭ টাকা। সব মিলিয়ে মোট ৪ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার ৪৪২ টাকা ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।
এ বিষয়ে লুবনান গ্রুপের পরিচালক জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সারাদেশে ১০৮টি শো-রুম রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ওই শো-রুমগুলোর ভ্যাট চালান সংরক্ষণ করতে পারিনি। এটা আমাদের ভুল। এই ভুলের মাশুল হিসেবে সরকারের কোষাগারে অপরিশোধিত ভ্যাট হিসেবে আজ ভ্যাটের টাকা জমা দিয়েছি। করোনার মতো মহামারিতেও আইনের প্রতি যথাযথ সম্মান জানিয়ে সরকারের ধার্য করা টাকা জমা দিয়েছি। আগামী দিনগুলোতে সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করতে চাই। করোনার মতো প্রতিকূল পরিবেশে আমরাও সরকারের সহযোগিতা চাই।
আরএম/আরএইচ/এমএইচএস