করোনাকালে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলা
সরকারি প্রণোদনার সুবিধাভোগী ১ কোটি ২৪ লাখ গ্রাহক
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে প্যাকেজের ৮৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় ৮৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এসব প্যাকেজের প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ গ্রাহক।
সোমবার (৩১ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ধনী দেশগুলো যেখানে করোনা মহামারিতে শূন্যের কোঠায় প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার বর্তমানে ৫ শতাংশের উপরে। এটা সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য খাতের দক্ষতা, সামর্থ্য ও একান্ত কর্মনিষ্ঠার বহিঃপ্রকাশ।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (সহকারী মুখপাত্র) জী এম আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত বার্তায় বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিতকরণ, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে সরকার এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। পরে রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফের মাধ্যমে আরও ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এতে প্রণোদনার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এসব প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে ৯টির কার্যক্রমের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি যুক্ত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, দেশের ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর, ক্ষুদ্র কুটির ও মাঝারি শিল্প, কৃষি খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, শস্য ও ফসল খাতে ৪% রেয়াতি সুদ হারে কৃষিঋণ প্রদান, ৫ বছর মেয়াদি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ খাতে ঋণ বিতরণ করে। এছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ’ কর্মসূচির আওতায় ঋণ বিতরণ, উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র বিমোচন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে আনসার ও ভিডিপি ব্যাংকের অনুকূলে তহবিল বরাদ্দ করা হয়। এসব প্রণোদনায় ১০টি প্যাকেজের আওতায় প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। তবে পরোক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন-ভাতা এবং গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের বিপরীতে সুদ ভর্তুকি বাবদ মোট ৫০০০ কোটি টাকা এবং ১৩৯০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যেখানে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা যথাক্রমে প্রায় ৩৮ লাখ ও ৭৩ লাখ এবং প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ জন। সব মিলিয়ে ১২টি প্যাকেজের আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ। প্যাকেজের ৮৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ৮৩ শতাংশ এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে।
ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে ২০ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৯৫ হাজার ৭৩৩ জন। আর পরোক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১১ লাখ।
কৃষি খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের বিপরীতে মোট বিতরণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে ৩ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজের বিপরীতে অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার।
শস্য ও ফসল খাতে ৪% রেয়াতি সুদ হারের কৃষি ঋণ প্রদান প্যাকেজ হবে চাহিদা অনুযায়ী। এক্ষেত্রে মোট বিতরণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬ কোটি টাকা; প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ। আনসার ও ভিডিপি ব্যাংকের অনুকূলে কৃষি উৎপাদন ও দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে কৃষি খাতে ৩০০ কোটি টাকার বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা। অপরদিকে ক্ষুদ্র ঋণে ২০০ কোটি টাকার বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৭২ কোটি টাকা। এসব উপখাতে মোট প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৮৭ হাজার।
এই বৃহৎ আকারের প্রণোদনা প্যাকেজের অন্যতম একটি খাত হলো ইডিএফ, যার পরিমাণ মোট ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ প্যাকেজের বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার প্রায় ৯৯.৫০ শতাংশ। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৬৫০ জন।
এসআই/এসকেডি