নতুনভাবে কর আরোপ না করে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার বন্ধ করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ রাখার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। 

একই সঙ্গে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিশেষ নজর দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সম্প্রসারণমূলক বাজেট করতে বেশ কিছু সুপারিশও করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি।

সোমবার (৩১ মে) সিপিডি ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ইন ২০২০-২১’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব পরামর্শ দিয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। পর্যালোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে চলমান কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সাধারণ মানুষ কর্ম হারাচ্ছে। কিন্তু সরকার সাধারণ বেকার মানুষের জন্য প্রণোদনার যে প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে তা বেকারের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে প্রণোদনা পৌঁছানোর কার্যক্রম তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্যিক ব্যাংক, সুধী সমাজ ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে তাতে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রথম নয় মাস পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪২ শতাংশ। পরিচালন কার্যক্রমে অগ্রগতি ৫০ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) ১০ মাসের বাস্তবায়ন মাত্র ৪৯ শতাংশ। এরমধ্যে আবার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র ৩১ শতাংশ। অথচ চলমান কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জে মোকাবিলার জন্য চলতি অর্থবছর স্বাস্থ্য খাতে আগের চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।’

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ব্যয় করা যাচ্ছে না মন্তব্য করে সিপিডির এই গবেষক  বলেন, ‘মহামারির কারণে অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবিলার জন্য মধ্যবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কীভাবে বৈষম্য রোধ করা যায় তা মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে।’

তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্যও যথেষ্ট পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা বেকারদের প্রণোদনা প্রয়োজন অথচ তারা পাননি। তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যাবে তা মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে বলে মনে করে সিপিডি। কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের খানা পর্যায়ে আয় বৃদ্ধিতেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রামের প্রচ্ছন্ন বেকার মানুষগুলো এখনও শহরের দিকে আসার চেষ্টা করছে। এসব মানুষকে কীভাবে প্রণোদনার আওতায় আনা যায় তা মধ্য মেয়াদি কার্যক্রমের আওতায় খুঁজে বের করতে হবে।’

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক সুরক্ষা খাত শক্তিশালী করা। এই খাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বরাদ্দের তুলনায় আমাদের বরাদ্দ সবচেয়ে কম।’

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ব্যয় করতে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে এখন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই খাতে একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা বাড়ানো যায় সেদিকে চিন্তা করতে পারে সরকার।’

পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে সিপিডি বলছে, ‘অনেক সময় দেশীয় উৎপাদিত চাল ডালের দাম ঠিক থাকছে না। আবার আমদানি পণ্যের দামও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকছে না। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর ভোগ্যপণ্য সয়াবিন তেল, আটা ও ময়দার দাম স্থানীয় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণে রেখে এই মহামারিতে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।’

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী বাজেটে আরও বরাদ্দের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করা। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন তিনি।

আরএম/ওএফ