উদীয়মান শিল্পপ্রতিষ্ঠান সচল রাখতে বিশেষ তহবিল দরকার
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা কমে গেছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পথে বসে যাচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই যেসব উদীয়মান শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সচল রাখতে আসছে বাজেটে আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে বিশেষ একটি তহবিল রাখা জরুরি।
আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এমন প্রত্যাশার কথা জানান রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।
বিজ্ঞাপন
করোনার প্রভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরে প্রস্তাবিত নতুন বাজেটের আকার ছয় লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা ধরে এগোচ্ছে সরকার, যা শেষ মুহূর্তে কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের জন্য কেমন বাজেট প্রত্যাশা করছেন— জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস-উল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের ব্যাংক খাতে অর্থ সরবরাহ ঠিক ছিল। কারণ, সরকার ঘোষিত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ বাজারে এসেছে। তবে এর মধ্যেও যেভাবে অর্থ সরবরাহ হয়েছে সেভাবে ইনফ্লেশন বা মূল্যস্ফীতি হয়নি। এমন অবস্থায় বাজেট যদি সংকোচনমুখী হয় তাহলে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়বে। তাই চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবসাবান্ধব, সহনশীল ও সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রয়োজন।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহীর আশঙ্কা, মহামারির প্রভাবে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসে পড়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। সুদ মওকুফ, ঋণ সহায়তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য তারা ব্যাংকগুলোতে আসবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো কতজনকে সহযোগিতা করবে? বেসরকারি ব্যাংকগুলো তো করবেই না। সরকারি ব্যাংকগুলোরও নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। এসব বিবেচনায় উদীয়মান শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যারা অতিমারির এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডুবে যাচ্ছে তাদের পুনর্বাসনের জন্য বাজেটে একটি দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল দরকার। এ তহবিলের অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করা যাবে। ফলে কর্মসংস্থান যেমন নষ্ট হবে না, দেশের অর্থনীতিও ঠিক থাকবে।
তিনি বলেন, একজন ব্যাংকার হিসেবে আমি মনে করি, উদীয়মান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচাতে হলে অবশ্যই বাজেটে ওয়েলফেয়ার প্রোগ্রামের (কল্যাণমূলক কর্মসূচি) ঘোষণা থাকা জরুরি। এতে অর্থনীতির খাতগুলো চাঙা রাখা সম্ভব হবে।
সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি হলে আগে বাজেটে বিশেষ অর্থের বরাদ্দ রাখা হতো— জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এ অর্থ দিচ্ছে না সরকার। তবে এটিকে ভালো মনে করি। জনগণের করের টাকা থেকে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ নেওয়া অপমানজনক। তেমনি সরকারের দেওয়াটাও ঠিক নয়। এ অর্থ দিয়ে অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করা যায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনে টাকা না দিয়ে বিকল্প চিন্তা করতে পারে সরকার। সার্বভৌম অনুদান দিতে পারে, পাশাপাশি তদারকি করেও মূলধনের সংকট দূর করা যায়। অর্থাৎ সরকার সরাসরি ব্যাংকগুলোকে কোনো টাকা দেবে না, নীতিসহায়তা দেবে। যেন ব্যাংকগুলো নিজেরাই তাদের মূলধনের সংকট মেটাতে সক্ষমতা অর্জন করে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক হওয়ায় বিনামূল্যে সরকারকে আমরা বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকি। যেখান থেকে আমাদের কোনো আয় হয় না। যেমন- মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, ছাত্রদের কল্যাণ তহবিলের টাকা বিনামূল্যে বিতরণ করে আসছি। এসব সেবার মূল্য নিলে আমাদের বাড়তি আয় হতো। ঘাটতিতে পড়তে হতো না। তাই সরকার আমাদের টাকা না দিয়ে গ্রান্টি দেবে, যাতে আমরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারি। এছাড়া বন্ড ছেড়ে আমরা মূলধন সংকট মোকাবিলা করতে পারি।
এসআই/এমএআর/