শিক্ষায় বরাদ্দ থাকছে পৌনে ৪৬ হাজার কোটি টাকা
চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য আট হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এবার মূল বাজেটের আকার বাড়লেও ইউনেস্কো ও শিক্ষাবিদদের দাবি অনুযায়ী বরাদ্দ সেভাবে বাড়ছে না।
আসছে অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের জন্য নয় হাজার ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দ থাকছে ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে এমপিও খাতে নির্দিষ্ট করে বরাদ্দ রাখা না হলেও এবার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ইউনেস্কো এডুকেশন ফ্রেমওয়ার্কে (বাংলাদেশ এর অনুস্বাক্ষরকারী ও সমর্থনকারী দেশ) একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ থেকে ৬ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রতি বছরই শিক্ষা খাতের এ আর্থিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অথচ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ছাড়া অন্য সব দেশ এ খাতে জিডিপির শতাংশ হারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা শিক্ষা খাতে যথাক্রমে জিডিপির ৩ দশমিক ৮, ৩ দশমিক ৭ ও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয় করে। ভুটান শিক্ষা খাতে ব্যয় করে জিডিপির ৬ শতাংশ।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ছাড়া অন্য সব দেশ এ খাতে জিডিপির শতাংশ হারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা শিক্ষা খাতে যথাক্রমে জিডিপির ৩ দশমিক ৮, ৩ দশমিক ৭ ও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয় করে। ভুটান শিক্ষা খাতে ব্যয় করে জিডিপির ৬ শতাংশ
গত ২৪ এপ্রিল গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত ‘করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষা : কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপের প্রস্তাবনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়। বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয়ের সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতেরও প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া শিক্ষা বাজেটের ২০ শতাংশ জেলা ও উপজেলায় সরাসরি দেওয়া, যাতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে অর্থাৎ স্কুল রি-ওপেনিংয়ে (পুনরায় বিদ্যালয় খোলা) যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া যায়।
সেখানে আরও বলা হয়, শিক্ষা ডিজিটালাইজেশনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সেলফ লার্নিং (স্বশিক্ষা) উপকরণ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতে সেগুলো পৌঁছে দিতে হবে। যাতে তারা নিজে নিজে শিখতে পারে। এছাড়া টিচিং ও লার্নিংয়ে যেমন উন্নয়ন করতে হবে, তেমনি শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি তোলা হয় সংলাপে।
এবারও উপেক্ষিত থাকছে ইউনেস্কোর পরামর্শ ও শিক্ষাবিদদের দাবি
গত কয়েক বছর ধরে বাজেটে শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তিকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষা খাতের প্রকৃত বাজেট পরিকল্পনাটি অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এবারও শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ থাকছে। তবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য এ কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) খাতভিত্তিক মোট বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব হয়েছিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। দুই খাত মিলিয়েও ইউনেস্কোর চাওয়া অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ছয় শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়নি। এবারও ইউনেস্কোর দাবি পূরণ হচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) খাতভিত্তিক মোট বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব হয়েছিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। দুই খাত মিলিয়েও ইউনেস্কোর চাওয়া অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ছয় শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়নি। এবারও ইউনেস্কোর দাবি পূরণ হচ্ছে না
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত বছর সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালন (সেবা) খাতে ১৫ হাজার ৫৩৬ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে নয় হাজার ৪০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ মন্ত্রণালয়ের দুই খাত মিলিয়ে মোট ২৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সেবা খাতে ২১ হাজার ২৫২ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে ১১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। উভয় খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয় ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের জন্য আট হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে সেবা খাতে ছয় হাজার ৩৬৮ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে এক হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৩৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৭০ লাখ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের জন্য নয় হাজার ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এবারের বাজেটে ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুখবর থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ
বিগত বছরগুলোর বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট বাজেটের অর্থ বাড়ায় শিক্ষা খাতের বরাদ্দও বাড়ে। কিন্তু বরাদ্দের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হয়নি। জিডিপির দিক থেকেও ভালো অবস্থানে নেই শিক্ষা খাতের বাজেট। কয়েক বছর ধরে জিডিপির দুই থেকে তিন শতাংশের কাছাকাছি থাকছে বরাদ্দ পরিমাণ।
২০১১-১২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার। ওই বছর শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। এরপর বিগত নয় অর্থবছরের মধ্যে এক বছর বাদে প্রতি বছরই শিক্ষা খাতের বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এছাড়া যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার অধিকাংশই চলে যায় বেতন-ভাতা ও অবকাঠামো খাতে। কেবল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল জাতীয় বাজেটের ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য থাকছে সুখবর
এবারের বাজেটে ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুখবর থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে, বাকি ১০০ কোটি টাকা কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব রাখছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে এবার বাজেটে এমপিও খাত ও করোনা পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আশা করি অর্থ মন্ত্রণালয় সেটি দেবে। রুটিন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তকরণে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ খাতে বরাদ্দের বাইরেও অতিরিক্ত অর্থ দিয়েছে সরকার। আশা করি এবারও সেটি থাকবে।
এনএম/এমএআর