অর্থনৈতিক শুমারিতে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) অসহযোগিতা করছে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো। গণনাকারীরা একাধিকবার পোশাক কারখানায় গেলেও সঠিক তথ্য দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। 

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) চলমান দেশব্যাপী অর্থনৈতিক শুমারি প্রকল্পে সাভার এলাকায় ফিল্ড ভিজিটের সময় এ চিত্র দেখা গেছে। 

চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী অর্থনৈতিক শুমারি। চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারির মূল তথ্য সংগ্রহের কাজ ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। দেশের ৪ কোটি পরিবারের মধ্যে এক কোটি ২২ লাখ অর্থনৈতিক পরিবার বা ইউনিট আছে। সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৭৩ শতাংশ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান আছে। তবে অধিকাংশ অর্থনৈতিক ইউনিট ব্যয়ের সঠিক তথ্য দিতে চাইলেও আয় ও মূলধনের তথ্য দিতে গড়িমসি করছে। 

পোশাক শিল্প কারখানাগুলো সব থেকে বেশি অসহযোগিতা করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস)। আয় ও মূলধনের তথ্য দিলে নতুন করে কর বৃদ্ধি করা হতে পারে কিনা এই সব নানা ভুল ধারণা পোষণ করেই মূলত তথ্য দিতে গড়িমসি করছে অর্থনৈতিক ইউনিটগুলো। তারপরও বিবিএসের গণনাকারীরা একাধিকবার তথ্য সংগ্রহের জন্য ছুটছে এসব ইউনিটে।

সাভার আশুলিয়া কাঠগড়া এলাকায় অবস্থিত আজমাত গ্রুপের আজমাত অ্যাপারেলস নিটওয়্যার লিমিটেডে। এই পোশাক কারখানায় তিনদিন গেলেও আয়-ব্যয়–মূলধন ও শ্রমিকের সঠিক তথ্য দেয়নি। বার বার আসতে বলেও গণনাকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ অর্থনৈতিক শুমারির কাজে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার জন্য পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) থেকে অবগত করা হয়। তারপরও তথ্য দিতে গড়িমসি করছে পোশাক কারখানাগুলো।

সাভার আশুলিয়ার বিবিএস জোনাল অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেক অর্থনৈতিক পরিবার বা ইউনিট আছে তারা আয়ের সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। তবে তাদের যদি ঋণ থাকে এই তথ্য দিচ্ছে। এমনকি মূলধনের তথ্যও দিচ্ছে না। আয় কত হয়েছে এটা জিজ্ঞেসে করলে বলে কোনো রকম ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আল্লাহ কোনো রকম চালিয়ে নিচ্ছে বেচাকেনা নেই।

কেন তথ্য দিচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা হয়ত ভাবছে নতুন করে কর জালে জড়িয়ে পড়ে কি না। আমাদের তথ্য দিতে সব থেকে গড়িমসি করছে পোশাক কারখানাগুলো। তারা একবার বলে সকালে এসো, আবার বলে বিকেলে এসো, এভাবে তিন থেকে চার দিন ফিরিয়ে দিচ্ছে। 

অর্থনৈতিক শুমারির প্রকল্প পরিচালক এস এম শাকিল আখতার বলেন, শুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা সঠিক সময়ে এটি শেষ করতে পারবে বলে আশা করছি। দেশের আর্থিক অবস্থা, কর্মসংস্থান, ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এবারের শুমারিতে বিশেষ করে বিদেশি কর্মীদের পরিসংখ্যানও সংগ্রহ করা হবে। যাতে জানা যাবে, দেশে কতজন বিদেশি কর্মী কাজ করছেন। তারা কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং তাদের মধ্যে নারী-পুরুষের সংখ্যা কত।

তিনি আরও বলেন, আমরা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি তথ্যগুলো যাচাই করছি। যে সব তথ্য সন্দেহ মনে হচ্ছে সেটা পুনরায় ফেরত পাঠাচ্ছি। আশা করি প্রযুক্তির সহায়তায় এবার একটি নির্ভুল অর্থনৈতিক শুমারি পাবে দেশবাসী।

এসআর/এমএন