সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ফলে আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। তবে মুরগি-গরু-খাসির মাংসের তুলনায় কিছুটা স্বস্তি মিলছে মাছের বাজারে।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানী রামপুরা এলাকার বাজার ঘুরে মাছ-মাংসের দামের এসব চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। দেশি মুরগি কেজি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি ১৭০-১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, কার্প মাছ ২২০-২৫০ টাকা, রুই মাছ ২৬০-৩০০ টাকা, মলা মাছ ২৮০, চাষের কই ২০০ টাকা এবং দেশি কই ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা পর্যন্ত। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে পাবদা মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যেখানে পাবদা মাছ ছিল ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা, আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও বাজারে শোল মাছ ৬০০-৭০০ টাকা, টাকি মাছ ৩৫০ টাকা এবং সরপুঁটি মাছ ২০০ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে নিম্ন আয়সহ সাধারণ ক্রেতাদের মাংসের চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ব্রয়লার মুরগি। তবে মাঝেমধ্যেই হুটহাট করে দাম বেড়ে যায়, তখন আবার বিক্রিও কিছুটা কমে যায়। তবে নদী ও সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ ভালো থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মাছের দাম কিছুটা কমেছে।

রামপুরা এলাকার তিতাস রোডে একটি মেসে ভাড়া থাকেন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. নাঈম আহমেদ। দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলেই দীর্ঘশ্বাস দেখা যায় তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, বছর দুয়েক আগেও ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকাতেই থাকা-খাওয়া সব মিটে যেতো। কিন্তু এখন প্রতিমাসে খরচ হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাছ-মাংসসহ প্রতিটা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যেরই দাম বেড়েছে। যেকারণে আমার মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঢাকা শহরে টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাঈম আরও বলেন, পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই করি না। একটা টিউশনি করাতাম, সেটাও ছুটে গেছে। প্রতিমাসে হাত পেতে বাড়ি থেকে টাকা আনতে হয়। কিন্তু গত দেড়-দুই বছরে পরিবারের আয়ও তো বাড়েনি। তারাই বা দেবে কি করে? আমাদের আসলে এমন পরিস্থিতি হয়েছে, না পারছি কারও কাছে হাত পাততে, আবার না পারছি প্রতিমাসে ঠিকঠাক মতো খরচ চালাতে।

বাজার করতে আসা আরিফুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় আজকের বাজারে মুরগি দামটা একটু বেশি। দুই সপ্তাহ আগেও ১৭৫ টাকা কেজি ব্রয়লার কিনেছি, আজকে কিনতে হয়েছে ১৯০ টাকায়। তবে মাছের দাম কিছুটা তুলনামূলক কম আছে।

তিনি বলেন, একটা সময় প্রতি সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস খাওয়া হতো। এখন গরুর মাংসের জায়গা দখল করেছে মুরগির মাংস। গরুর মাংস এখন কিনতে গেলেও বারবার হিসাব করতে হয়। মুরগির দাম কম থাকাটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তির জায়গা। তবে এর দামটা আরও কম হওয়া উচিত।

মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। সে তুলনায় দামটা কমই বলা যায়। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লারের দামটা কিছুটা বেড়েছে। সম্ভবত শীতের কারণে বেড়েছে। এই সময়ে শীতে কিছু মুরগি মরে যায় এবং রোগবালাইও বেশি হয়। যে কারণে খামারি পর্যায়েই বেশি দামে কিনে আনতে হয়। তবুও আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, এখন খামারিরা গরু কম ছাড়ছে। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে তারা গরু তৈরি করছে। যে কারণে এখন যেগুলোও বিক্রি হচ্ছে দাম তুলনামূলক একটু বেশি। তাই মাংসের বাজারেও তার প্রভাবটা পড়েছে। গরুর মাংস মোটামুটি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকার মধ্যেই আটকে আছে। আর কমবে বলে মনে হয় না।

টিআই/এমএ