শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয়
দুর্নীতির সম্পদের পাহাড় ফেরাতে না পারলে কীসের বিপ্লব
দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো কেন বাজেয়াপ্ত হলো না? এ সম্পদ কোথায় গেল? এই সম্পদ কেন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার অধিগ্রহণ করল না?
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, লুণ্ঠনকারীদের যাদের ব্যাংক ঋণ আছে সেগুলো সমন্বয়ের জন্য তাদের সম্পত্তি কেন দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ করা হলো না? এমন পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এটি করা গেলে আমি নিশ্চিত মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের যে পাহাড় গড়ে উঠেছে, সেখান থেকে জনগণের সম্পদ ফিরিয়ে নিতে না পারলে কীসের বিপ্লব হলো।
আরও পড়ুন
ইআরএফ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের যৌথ আয়োজনে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাজেটের উন্মুক্ততা নিয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার আর্থিক খাতে যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে তার ফল আসছে না, মানুষ এত ধৈর্য রাখতে পারছে না। কিংবা আস্থার সংকট হচ্ছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালীন ইআরএফের এক অনুষ্ঠানে এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন ‘ডাল মে কুচ কালা হে’। এই উদ্ধৃতি আবারও উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী রোববার বলতে পারব কোন কোন ডাল পচা, আর কোন কোন ডাল ভালো ছিল। রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হবে। পরদিন সংবাদ সম্মেলনে জনগণের জন্য গত সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হবে।
দেশের দুটি ফুসফুস ব্যাংক ও জ্বালানি খাত। এই দুই খাতে বড় ধরনের অনিয়মের কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে বেশি লুটপাট হয়েছে। এসব তুলে ধরা হবে প্রতিবেদনে।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, সাধারণ মানুষের যে ধারণা আছে তার চেয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল। এমন একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো উত্তরাধিকার সরকারের করার কিছু থাকে না। ব্যাংকিং খাতে সমস্যা বেশি ছিল। তাৎক্ষণিক দূর করার চেষ্টা চলছে।
আর্থিক স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সংস্কার করা কঠিন হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এমনভাবে রেখে গেছে তার খেসারত আমরা গুনছি। তারা বেপরোয়া অনেক নীতি নিয়েছিল। ফলে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট ও চুরি বন্ধ হয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ও রপ্তানি বেড়েছে। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে। কারণ, আগামী ছয় মাস অত্যন্ত কঠিন সময় যাবে। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ না বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরে র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ বলেন, সরকারের ব্যয় স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে কিনা, জনগণ খুবই কম জানতে পারছে। বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতা ৩৭ শতাংশ। যা যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার চেয়ে পিছিয়ে আছে। কেবল পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বাজেটে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ১১ শতাংশ আর বাজেট বাস্তবায়ন তদারকি হচ্ছে ৩৭ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল কবির বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এটা কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায় তার চেষ্টা করা হবে। জরিপে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে তা নিয়ে কাজ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বলেন, এখন প্রত্যাশা সবার বেশি। রাতারাতি মূল্যস্ফীতি কমে যাবে না। এর জন্য সময় গালবে। তবে মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে আস্থার সংকট আছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু শুরুতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে যোগাযোগে ঘাটতি ছিল। আর আস্থা সংকটের আরেকটি কারণ আইনশৃঙ্খলার ঘাটতি।
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
এসআই/এমজে