সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বেশকিছু মাছের দাম কমে এসেছে। তবে বাকিসব মাছসহ মুরগির মাংস ও গরুর মাংসের দাম অপরিবর্তিতই রয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু মাছ গত একমাসের তুলনায় আজ অনেক কম দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে মাংস। অন্যদিকে ভোক্তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মাছ-মাংসের বাজার বাড়তি দামেই আটকে রয়েছে, যা আরও কমানো সম্ভব।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আজকের বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি। এছাড়াও বাজারে শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে মাছের মধ্যে কই-তেলাপিয়ার দামেও কিছুটা স্বস্তি মিলছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা এবং কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারে প্রতি কেজি পাবদা ৩৫০ টাকা, রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাঁতল ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, সরপুঁটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, রুপচাঁদা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, গলসা ৬০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, চাপিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড্ডা কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মুর্শেদ আলম। মাছ-মাংসের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশি মুরগি, গরু, খাসির মাংস তো অতিরিক্ত দামের কারণে খেতে পারি না। খাওয়ার মধ্যে কোনোভাবে কিনি ব্রয়লার আবার কোনো কোনো সময় সোনালি মুরগি। এগুলো দাম যদি একটু কম থাকে, তাহলে মাসটা কিছুটা স্বস্তিতে যায়। কিন্তু দামটা বেড়ে গেলেই আবার সমস্যায় পড়তে হয়। বর্তমান বাজারেও যে অবস্থা, তাতে করে ব্রয়লার মুরগিও কেনা এখন দায় হয়ে গেছে।

মুর্শেদ আলম বলেন, আমি মনে করি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত হলেই যথেষ্ট কিন্তু এই মুরগি আজকে কিনেছি ১৮০ টাকায়, যা হুটহাট করেই আবার ২০০-২১০ টাকা কেজি হয়ে যায়। কিন্তু সরকার গতমাসে ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিলো, কিন্তু এরপর থেকে একটি দিনের জন্যও ব্রয়লার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। সংশ্লিষ্টদের যদি বাজারে মনিটরিং না থাকে তাহলে শুধু দাম নির্ধারণের ঘোষণা দিয়ে কি লাভ?

মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু মাছ এখন পানির দামেই বিক্রি হচ্ছে। আজকের বাজারে মাঝারি সাইজের পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি, যা আগে সাধারণত ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এছাড়াও কই, তেলাপিয়া, রুই মাছের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় কম।

তিনি বলেন, আমরা যখন পাইকারি বাজার থেকে কম দামে মাছ কিনে আনতে পারি, তখন তেমনি কম দামেই খুচরা বাজারে বিক্রি করতে পারি। আবার যদি আড়তে দামটা বেশি থাকে, তখন বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কিছুদিন আগে বন্যাসহ বেশ কিছু কারণে দামটা বেশি ছিলো, এখন আবার সেটা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

এদিকে আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে দেখা গেছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৩০ টাকা, কক মুরগি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি আগের মতো বাড়তি দামে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা আর খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

রাসেল মিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, একটা সময় প্রতি সপ্তাহেই অন্তত একদিন মাংস খাওয়া হতো। কিন্তু এখন সেটা কঠিন হয়ে গেছে। এখন শুধু বাসায় কোনো মেহমান আসলেই মাংসটা খাওয়া হয়। কিন্তু দিনদিন যেভাবে দাম বাড়ছে, এখন আমাদের মাংস কেন অসম্ভব হয়ে যাবে।

গরু-খাসির মাংসের দাম প্রসঙ্গে মাংস বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, গরু-খাসির মাংসের দাম দীর্ঘদিন এক জায়গাতেই আছে। আজকের বাজারে গরু বিক্রি করছি ৭৫০ টাকায়, খাসি ১১০০ টাকায়। আমরা যদি তুলনামূলক কম দামে গরু-খাসি কিনতে পারি তাহলে ক্রেতা পর্যায়ে দাম আরও কমিয়ে রাখতে পারব। 

টিআই/এমএ