দুই লাখ ২১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিটি (এডিপি) প্রণয়ন করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৮ মে) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের খসড়াটি চূড়ান্ত হবে।  

আরও পড়ুন: উন্নয়ন বাজেটে মেগাপ্রকল্পগুলো যা পাচ্ছে

কার্যক্রম বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে আগামী অর্থবছরে ১৫টি সেক্টরের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৫৬০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর উন্নয়ন সহায়তা খাতের অনুকূলে বরাদ্দ ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এই খাতের হিসাবে এডিপিতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

আগামী এডিপিতে কোন খাত কত পাচ্ছে
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে আগামী এডিপিতে ১৫টি খাতভিত্তিক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ৫টি খাত হচ্ছে পরিবহন- যোগাযোগ, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাত।

১. পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। যা মোট বরাদ্দের ২৭.৪৮ শতাংশ।

২. এর পরেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ২০.৪৫ শতাংশ।

৩. গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৮২১ কোটি টাকা বা ১০.৬২ শতাংশ বরাদ্দা থাকছে। এছাড়া শিক্ষায় ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বা ১০.৪০ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা, মোট বরাদ্দের ৭.৭১ শতাংশ রাখা হচ্ছে।

৪. অন্য খাতের মধ্যে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদে ৮ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা, কৃষিতে ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক সেবা: ৪ হাজার ৬৩৭৩ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, গণ আদেশ ও নিরাপত্তায় ৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, সাধারণ সরকারি সেবায় ৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদনে প্রায় ২ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, সামাজিক সুরক্ষায় ১ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষায় ৯৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা।

চলতি বছরের এডিপির হাল
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। পরে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কমিয়ে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকায় সংশোধন করা হয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অর্থায়ন মিলে আকার দাঁড়ায় ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) হিসাব বলছে, গত ১০ মাসে তার অর্ধেক অর্থও খরচ হয়নি। এপ্রিল পর্যন্ত এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। খরচ হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬৬ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া ৩৩ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সে হিসেবে এখনও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দের ১ লাখ ৬ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়েছে। আরএডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে মে ও জুন এই দুই মাসের মধ্যেই খরচ করতে হবে অব্যয়িত অর্থ।

এসআর/এসএম